রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

কৃষিই হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণভোমরা

আলতাব হোসেন
  ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
কৃষিই হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণভোমরা

কৃষি বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। হাজার বছরের অবহেলিত এ বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এখনো কৃষির কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাতও এই কৃষি। ধান হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কৃষির বহুমুখীকরণ মৎস্য চাষ, পোলট্রি খামার, গরুর খামার, বছরব্যাপী সবজি ও ফলের চাষে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে জীবনমানের যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, তার পেছনে কাজ করেছে কৃষি খাত। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে শক্তিশালী বুনিয়াদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেই শক্তিশালী বুনিয়াদের অর্থনীতিকে কৃষি খাতই বরাবরের মতো সচল রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করছে। সেই বিবেচনাতে কৃষি খাতই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা।

কৃষিই হচ্ছে বাংলার আদি পেশা। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের অর্থনৈতিক উত্তরণের ভিত্তি হচ্ছে কৃষি। কৃষি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়ায় দেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা কৃষি এবং বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির বহুমুখীকরণ মৎস্য চাষ, পোলট্রি খামার, গরুর খামার, বছরব্যাপী সবজি ও ফলের চাষে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান হচ্ছে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে জীবনমানের যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, তার পেছনে কাজ করেছে কৃষি খাত।

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এই খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে সর্বদা ভঙ্গুর অর্থনীতি বলে ভর্ৎসনা করেছে পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু আজ বাংলাদেশ কৃষিনির্ভরতার কারণেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধসহ জলবায়ুর প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা চলমান থাকলেও দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে না পারার অন্যতম কারণ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। ১৯৭১ সালের তুলনায় খাদ্য উৎপাদন প্রায় পাঁচগুণ উৎপান বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার কোটি টন।

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। মহামারি করোনাকালে ধান উৎপাদনে একধাপ এগিয়ে এখন বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ। এ ছাড়া পাট রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। ইলিশ মাছ উৎপাদনে প্রথম বাংলাদেশ। সবজিতে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছে তৃতীয়, আম উৎপাদনে বিশ্বে নবম বাংলাদেশ। আলু উৎপাদনে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ। বস্ন্যাক বেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ। আর ছাগলের দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং জলবায়ু সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে বাংলাদেশ। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্ব উদাহরণ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। পরিশ্রমী কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রয়াসে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন ধান উৎপাদিত হতো। এখন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। হিসাব করলে তা ছয় টন আর এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি, উন্নতজাতের ব্যবহার ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনার ফলে দেশে ১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। ধান, গম, ভুট্টা আলু, আম বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষুষ্ণ শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব উদাহরণ। দেশের খোরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে এখন কৃষির অবদান ৪ শতাংশ। কৃষিতে দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং অব্যবহিত পরে প্রায় সাত কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দেশকে। তখন আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হতো। অথচ এখন দেশের লোকসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি, পাশাপাশি প্রতিদিন আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ২০ শতাংশ করে। এরপরও আমন, আউশ ও বোরো ধানের বাম্পার ফলনে বছরে প্রায় সাড়ে চার কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের খাদ্য সংকটকে ইঙ্গিত করে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ একটি 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলে মন্তব্য করেছিলেন। বাংলাদেশ এখন আর খাদ্য সংকটের দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন চাল-সবজিসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ ১৪৪টি দেশে বাংলাদেশি কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ১০৩ কোটি ডলার আয় এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ডলার বা এক হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি।

কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলার কৃষকরা এখানেই থেমে যাননি। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য উদাহরণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়তে পারে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সফলতাও বাড়ছে। ১৯৭২ সাল থেকে দেশি জাতকে উন্নত করে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবনের পথে যাত্রা করেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৭টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ১০২টি উচ্চফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা সংস্থা- বিনার বিজ্ঞানীরা লবণসহিষ্ণু খরাসহিষ্ণু ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একসময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। দেশে সবজির উৎপাদন যেমন বেড়েছে, ভোগও তেমনি বেড়েছে। দেশে মাথাপিছু সবজির ভোগ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি সবজি রপ্তানি করেও মিলছে বৈদেশিক মুদ্রা। শত প্রতিকূলতা সত্যেও বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন কৃষকরা। কৃষিবিদরা যথাসম্ভব তাদের সহায়তা করছেন। আর এই কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা জরুরি।

একসময় 'মাছে-ভাতে বাঙালি' কথাটি বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা বাহমশব। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এফএও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বে মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ফলটির উৎপাদনে শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। প্রায় সাড়ে নয় লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ মূল্যায়নে বলা হয়েছে।

আলু উৎপাদন সাফল্যের এক বিস্ময়। এক দশক আগেও উৎপাদন ছিল অর্ধলাখ টনের নিচে। বর্তমানে দেশে দেড় কোটি টন আলু উৎপাদন হচ্ছে। আলু বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৭টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ১০২টি উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। প্রতিকূল ও অপ্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন তারা। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা সংস্থা বিনার বিজ্ঞানীরা লবণসহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন- যা বিশ্বে সেরা।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় বিশ্বে কৃষিতে ১১ খাতে সেরা বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) স্বীকৃতি দিয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক বলে উলেস্নখ করেছেন বিশিষ্টজনরা। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা, চালসহ কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ-মাংস রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০২২-২৪ মেয়াদে এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনগণের একটা বিশাল অংশ তাদের জীবনধারণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে ৩ থেকে ৪ বছর ধরে আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকা এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের তৎপরতায় কৃষক ভালো বীজ, জমিতে সুষম সারের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পরিমিত সেচের কারণে বর্তমানে পর্যাপ্ত ধান উৎপাদন হচ্ছে।

প্রচলিত কৃষি কাজের বাইরে অর্থাৎ ধান-পাট এসব চাষের বাইরে কৃষির বিভিন্ন উপ-খাত যেমন, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, পশুপালন, দুগ্ধ খামার, বছরব্যাপী সবজি ও ফলের চাষে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এতে যেমন বহু বেকারের কর্ম সংস্থান হয়েছে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। গত এক দশকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা সত্যিই অতুলনীয়। ভুললে চলবে না যে, এখনো মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ কৃষি খাতেই নিযুক্ত। ভবিষ্যতেও এ খাতে শ্রমশক্তির একটি উলেস্নখযোগ্য অংশ যুক্ত থাকবে তা বোঝা যায়। সরকারও তাই কৃষির দিকে নীতি মনোযোগ অব্যাহত রেখেছে। নিঃসন্দেহে দিনবদলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কৃষিও বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি বাজেটে কৃষি খাতে বাড়তি বরাদ্দ দিয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য নীতিনির্ধারকরা বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকায়নে। শিক্ষিত তরুণরাও তাই আজকাল নতুন করে কৃষির দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি গবেষণায় বেশি বেশি নীতি সমর্থন থাকায় নতুন নতুন জাতের ধান, গম, ভুট্টা ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিংকসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেন আমাদের কৃষি গবেষকরা। এর বাইরে পাটের কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি পাটের জীবনরহস্যও উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান। পাটপণ্য রপ্তানিতেই আবার সোনালি স্বপ্ন দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অবজ্ঞা করেছিলেন, পঞ্চাশ বছর পরে সে দেশটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের জন্য রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি এখন শক্ত ভিত্তির উদ্বৃত্ত খাদ্যের বাংলাদেশ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং রপ্তানিকারক দেশ। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় এবং গড় ফলনের হিসেবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে