রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে মৎস্য খাত

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
  ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে মৎস্য খাত

গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করতে মৎস্য খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মৎস্য খাত প্রান্তিক পর্যায়ের একজন মানুষকে কর্মক্ষম করে তুলছে। বেকারত্ব দূর করছে। অনেকে উদ্যোক্তা হচ্ছেন, স্বাবলম্বী এবং তার দারিদ্র্য দূর করছেন। এভাবে অর্থনীতির ওপর ঢাকামুখিতা বা বড় বড় শহরমুখিতার চাপ কমছে। পাশাপাশি এ খাতের মাধ্যমে আমাদের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে।

মাছ আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই প্রবাদেও বলা আছে 'মাছে ভাতে বাঙালি'। জনবহুল বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি, সৃষ্টি, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে মৎস্য খাত বিগত কয়েক দশক যাবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মৎস্য সম্পদে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ফলে, বর্তমানে দেশের মানুষ গড়ে জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছেন।

সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৪২ দশমিক ৬৭ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৫ হাজার ১৯১ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে- যা গত বছরের চেয়ে শতকরা ২৬ দশমিক ৯৬ ভাগ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে টাকার অংকে মৎস্য উপখাত থেকে জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা- যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৭৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের সামগ্রিক কৃষি সেক্টরে মৎস্য খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত থাকার ফলে মাছ উৎপাদন নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রম্নতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে মাছ উৎপাদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় রেকর্ড তৈরি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশ আজ অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয়ে মাছ আহরণে বিশ্বে ৩য়, স্বাদুপানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে ২য়, বদ্ধজলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৫ম, অ্যাকোয়াকালচার, অর্থাৎ মাছের সঙ্গে অন্যান্য জলজউদ্ভিদ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ আহরণে বিশ্বে ১ম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়া এবং ফিনফিস উৎপাদনে যথাক্রমে ৮ম ও ১২তম। তাছাড়া তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য়।

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটিও দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ এখন ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ৫৫টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে; বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে ২০০৮-২০০৯ সালে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন- যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন। অর্থাৎ গত ১৩ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে শতকরা প্রায় ৮৬ ভাগ। এছাড়া গত ২০১৬ সালে ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইলিশের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের। এটা জাতির জন্য গৌরবের। দেশে মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান শতকরা ১২ দশমিক ২২ ভাগ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান বর্তমানে শতকরা ১ ভাগ। ইলিশ উৎপাদনের সঙ্গে দেশের ৫ লাখ লোক সরাসরি এবং ২০-২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।

বাংলাদেশ পানিসম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পুকুর, দীঘি, ডোবা-নালা, নদনদী, খাল-বিল ও বাঁওড়। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে রয়েছে বিশাল হাওড় এলাকা- যা আমাদের মৎস্য সম্পদের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর আয়তনের প্রায় ১৩ লাখ পুকুর ও দীঘি রয়েছে। দেশের ২৪ হাজার কি.মি. দীর্ঘ নদনদীর আয়তন প্রায় ১০ দশমিক ৩২ লাখ হেক্টর। এ ছাড়া রয়েছে ১ দশমিক ১৪ লাখ হেক্টর জলায়তনের প্রায় ১১ হাজার বিল, ৫ হাজার ৪৮৮ হেক্টর আয়তনের বাঁওড়, ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর কাপ্তাই হ্রদ, প্রায় ২.০০ লাখ হেক্টর সুন্দরবন খাঁড়ি অঞ্চল এবং ২৮ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টরের বিশাল পস্নাবনভূমি। এসব ক্ষেত্রে মানুষ সারা বছরই কোনো না কোনোভাবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া মৎস্য খাতে চিংড়ি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে এটি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধি নিয়ে আসবে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয়, ২ হাজার ৭ শত ৩০ দশমিক ৫৬ কোটি টাকার। তাই বলা যায়, সম্ভাবনাময় এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

মাছ শুধু খাবার ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক অবদান রেখে চলছে। মাছের চর্বি, কাঁটা ও হাড় ইত্যাদি জৈবসার, ওষুধ, সাবান, ছাপার কালি, আঁঠা প্রভৃতি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া মাছের আঁইশ, হাড়, দাঁত, ইত্যাদি দিয়ে কুটির শিল্পজাত সৌখিন দ্রব্য তৈরি করা হয়। এছাড়াও, মাছের আঁইশ, কাঁটা, নাড়ি-ভুড়ি চূর্ণ হাঁস-মুরগির সুষম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব শিল্পের মাধ্যেমে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান হচ্ছে, অন্যদিকে, অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা।

বাংলাদেশে মাছ চাষের যে সম্ভাবনা রয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে মাছচাষ জোরদার করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ হতে সাধারণত আইকিউএফ, কুকড, ফিস ফিলেট ইত্যাদি ভ্যালু অ্যাডেড মৎস্যপণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহ- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। রপ্তানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ি, শুঁটকি মাছ, কাঁকড়া, কুচিয়া ও ব্যাঙ ইত্যাদি রয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে মাছের বিভিন্ন ফুড আইটেম বিক্রি হচ্ছে। ফিশ ফিঙ্গার, ফিশ বল, সল্টেড প্রোন, প্রোন বল, ফিস পাউডার, ফিস নুডুলস ইত্যাদির চাহিদা মানুষের মাঝে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, একদিকে যেমন এসব শিল্পের সঙ্গে জনবল যুক্ত হয়ে বেকারত্ব হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে, দেশের অর্থনীতিতেও মাছের অবদান আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

'মৎস্য মারিব, খাইব সুখে' মধ্যযুগের এ শ্লোক আবার ফিরে এসেছে। 'মাছে-ভাতে বাঙালি' চাষের মাধ্যমে মাছের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে এসেছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে মৎস্য খাত ভূমিকা রাখছে। উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যবিমোচন ও গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে মৎস্য খাত ভূমিকা অব্যাহত রেখে চলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। বিশ্বের যে তিনটি দেশ মাছ উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) 'দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচার শীর্ষক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাষের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে কেবল ভারত ও চীন। ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। এ অর্জন অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের। এ ছাড়া এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিশ উৎপাদনে যথাক্রমে ৮ম ও ১১তম স্থান অধিকার করেছে। এ ছাড়া বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ার তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মাছ রপ্তানি হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৪৭ দশমিক ৫৯ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়। ২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ লাখ টন- যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি। উৎপাদিত মাছ যাতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ এক কোটি ৯৫ লাখ বা ১২ শতাংশের বেশি মানুষ মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাছ ও চিংড়িসহ অন্যান্য জলজ সম্পদের স্থায়িত্বশীল উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে উন্মুক্ত জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সুফলের মাধ্যমে দরিদ্র্য মৎস্যজীবী ও চাষি তথা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের চারটি উৎস রয়েছে। এগুলো হলো- অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয়, বদ্ধজলাশয়, আধালোনা পানির জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয়।

মুক্ত এলাকার সঙ্গে যুক্ত জলাশয়কে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় বলে। এর মধ্যে রয়েছে নদী ও খাঁড়ি অঞ্চল, হাওড়, বিল, হ্রদ ও পস্নাবনভূমি। পস্নাবনভূমি বর্ষাকালে পানিতে ভরে নদীর সঙ্গে একাকার হয়ে যায় এবং শুকনো মৌসুমে জমিতে পরিণত হয় এবং তখন সেখানে ফসলের চাষাবাদ করা হয়। বর্তমানে দেশে মোট মুক্তজলাশয়ের পরিমাণ ৪০ লাখ ৪৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর। অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়ের যেসব জলাশয় নদী, হাওড় বা বিলের সঙ্গে যুক্ত নয়, এদের অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয় বলে। অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়ের মধ্যে রয়েছে পুকুর, দীঘি, বাঁওড় ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে মোট বদ্ধজলাশয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৮ হেক্টর। সামুদ্রিক জলাশয়ের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং মহিসোপান ৮৫ হাজার ১৫৩ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এটি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উৎস।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে। এ ছাড়া এসব জলাশয়ে আরও ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি মাছ আছে। সামুদ্রিক এলাকায় রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ এবং ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। মাছের শ্রেণিবিন্যাস বিভিন্ন রকম হতে পারে।

বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয়ের ১ দশমিক ২৪ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশে মাছ রপ্তানি হয়। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৪২ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৫ হাজার ১৯১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা- যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ রপ্তানি করে ৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে, এই অর্থবছরে প্রায় ৭০ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

এফএও পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৭ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হবে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনের অস্থান থাকবে। বর্তমানে বিশ্বে মাছ উৎপাদনে প্রথম দেশ চীন, দ্বিতীয় ভারত আর তৃতীয় দেশ হচ্ছে মিয়ানমার। মৎস্য গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবেশ ব্যবস্থা মিঠাপানির মাছ চাষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এখানকার সোয়া দুই লাখ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয় আর গ্রামীণ এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাখ লাখ পুকুরে মাছ চাষের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি। সরকার যদি মাছ চাষে আরও মনোযোগী হয়, চাষিদের সহায়তা করে, তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ মাছ উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে