রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

কাঁচা আমের পুষ্টিগুণ

সানজিদা শারমীন
  ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
কাঁচা আমের পুষ্টিগুণ

স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর এই আম। কাঁচা ও পাঁকা দুই অবস্থাতেই জনপ্রিয়। আজ কথা বলব শুধু কাঁচা আম নিয়ে। কাঁচা আমের জুস, আম পান্না, আম মাখা, আমের ডাল, আমের আচার, আমের মোরব্বা, আমের চাটনি, আমের জ্যাম, আমের সালাদ আরও কতভাবেই না খাওয়া যায় এই কাঁচা আম। কাঁচা আমের এই খাবারগুলো আমাদের গ্রীষ্মের অনেক দুর্ভোগের মাঝে বিশেষ প্রশান্তিদায়ক প্রাপ্তি এনে দেয়। আমাদের প্রিয়, স্বাদের ও পুষ্টির, তৃষ্ণা মিটাতে এর জুড়ি মেলা ভার। বছরের খুব অল্পকিছু সময়ের জন্য এটি পাওয়া যায়। বিভিন্ন পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এই তাপদাহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষার জন্য কাঁচা আমের রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা।

১ কাপ আম থেকে আমরা পাচ্ছি : আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার-৬৭ শতাংশ ভিটামিন-সি, ১৮ শতাংশ ফলেট, ১০ শতাংশ ভিটামিন-এ, ১২ শতাংশ ভিটামিন-বি৬, ১০ শতাংশ ভিটামিন-ই, ৬ শতাংশ ভিটামিন-কে, ৫ শতাংশ রিবোফ্লাভিন, ৪ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম, ৪ শতাংশ থায়ামিন, ৭ শতাংশ নায়াসিন ও ৬ শতাংশ পটাশিয়াম। এছাড়াও, আছে ২২ গ্রাম শকর্রা, ২.৬ গ্রাম খাদ্য আঁশ এবং ১.৪ গ্রাম প্রেটিন।

কাঁচা আমের যত উপকারিতা: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক কাঁচা আম ভিটামিন-সি'র খুব ভালো উৎস। এক কাপ কাঁচা আমই আমাদের দৈনিক ভিটামিন-সি চাহিদার ৬৭ ভাগ পূরণ করতে পারে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকার কারণে এটি ইমিউন বুস্টার বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক হিসেবে কাজ করে। ক্রনিক রোগের ঝুঁকি হ্রাসকারী কাঁচা আমে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে কাজ করে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে- যার মাধ্যমে অনেক ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায়। ত্বকের ও চুলের স্বাস্থ্য ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিকারী এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, আলফা-ক্যারটিন, বিটা-ক্যারটিন- যার কারণে এটি ত্বক, চুল ও আমাদের শরীরের পাতলা জৈব ঝিলিস্নর গঠন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক। উচ্চ ভিটামিন-এ'র কারণে এটি চোখের দৃষ্টিশক্তির ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।

হৃদযন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক কাঁচা আম একটি উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার, যার ফলে এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং এটি হৃদযন্ত্র ও রক্তসংবহন তন্ত্রের কার্যকলাপে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ঘামাচি প্রতিরোধকারী। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার মাধ্যমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে ও ঘামাচি প্রতিরোধ করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধকারী এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশের উপস্থিতির কারণে একদিকে যেমন এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে, তেমনি এটি অল্প ক্যালরিতে অধিক সময় পেট ভরা রাখবার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। এতে থাকা উচ্চ আয়রন, ফলেট ও ভিটামিন-সি'র উপস্থিতি শরীরে রক্ত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে এনিমিয়া প্রতিরোধ করে।

গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের জন্য উপকারী উচ্চ আয়রন, ভিটামিন-সি এবং ফলেট'র ভালো সমন্বয়ের কারণে এটি একদিকে যেমন গর্ভবতী মায়েদের বাড়তি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে এনিমিয়া প্রতিরোধ করে, তেমনি এর টক স্বাদ এই সময়ের অরুচি ভাব ও দূর করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়।

শরীরের পানি ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী এটি একদিকে যেমন উচ্চ পটাশিয়াম যুক্ত হওয়ায় শরীরে সঠিক পানির পরিমাণ বজায় রাখতে সহায়তা করে, আবার এটি উচ্চ ভিটামিন-সি'সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। এভাবে প্রচন্ড গরমের সময় এটি শরীরের পানি ও তাপমাত্রার সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হিটস্ট্রোক প্রতিহত করতে সহায়তা করে।

সব খাবারই পরিমিত খাওয়া উচিত। অপরিমিতি বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে খেলে যে কোনো কিছুতেই হিতে বিপরীত হতে পারে। কাঁচা আম বেশি খেলে বদহজম, এসিডিটি, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। যেহেতু কাঁচা আম এসিডিক খাবার তাই যাদের এসিডিটির প্রবণতা আছে তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা আম খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। আবার কাঁচা আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকায় যাদের কিডনি রোগ আছে তাদের কাঁচা আম খাওয়ায় কিছু বাধাও রয়েছে। কারো কারো কাঁচা আমে এলার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, তাদেরও কাঁচা আম এড়িয়ে চলা উচিত।

একেবারে ছোট শিশুদের কাঁচা আম না দেওয়াই সমীচীন। অনেকেই আবার আম মাখা বা আমের আচার, আমের জুস খাবার সময় কাঁচা আমের টক ভাব কমাবার জন্য চিনি দিয়ে খেয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে চিনির কারণে যে বাড়তি শর্করা বা ক্যালোরি যোগ হচ্ছে সেই দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এবং যাদের চিনি খাওয়া বারণ তাদের এ ধরনের খাবার বর্জন করতে হবে।

সর্বশেষে বলতে হয়, সব খাবারেই নির্দিষ্ট কিছু গুণাগুণ ও কিছু ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে নিয়ম মাফিক খেলে আমরা ঝুঁকির অংশটুকু এড়িয়ে সর্বাধিক উপকারটুকু পেতে পারি।

লেখক: সানজিদা শারমীন, সিনিয়র ক্লিনিকাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট, ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উত্তরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে