সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গাছের নাম হাতিশুঁড় ঔষধি গুণে ভরপুর

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
গাছের নাম হাতিশুঁড় ঔষধি গুণে ভরপুর

গাছের নাম হাতিশুঁড়। পুরনো দালান ঘেঁষে কিংবা রাস্তার ধারে অন্য আগাছার মাঝে এ গাছটি দেখা যায়। এ গাছের বাঁকানো পুষ্পদন্ডে ফুটে থাকে সাদা সাদা ফুল। গজদন্ড অর্থাৎ হাতির দাঁতের মতো শুভ্র এই ফুল। পুষ্পদন্ড হাতির শুঁড়ের মতো বাঁকানো, তাই গাছটির এরকম নাম। সংস্কৃত নাম শ্রীহস্তিনী। কারও চোখ টকটকে লাল হয়েছে, কড় কড় করছে- মনে হচ্ছে বালি পড়েছে। এমনটা হলে হাতিশুঁড় গাছের পাতার রস অব্যর্থ ওষুধ।

এই ভেষজ গাছটি বর্ষজীবী ছোট গুল্ম। গাছটি আগাছার সঙ্গে এখানে সেখানে জন্মায় তাই সাধারণের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। মোটামুটি এক দেড় ফুট লম্বা হয়। গাছের কান্ড ফাঁপা, নরম। সারা দেহে ছোট ছোট রোম আছে। গাছের ওপরের দিকের কান্ড চৌকো, নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত গোলাকার। পাতা খসখসে, একের বিপরীত অন্য পাতাটির অবস্থান। ডালের নিচের দিকের পাতা বড়, পত্রবৃন্ত লম্বা। বড় পাতাগুলো দেখতে বর্শার ফলার মতো। পাতাগুলো আঙুল দিয়ে ঘষলে গন্ধ পাওয়া যায়। ফুলগুলো শ্বেতশুভ্র। পত্রদন্ডে ছোট ছোট ফুলগুলো দুই সারিতে পর পর সাজান থাকে। বড়ই মনোরম দেখতে। চরক সংহিতাসহ অন্যান্য প্রাচীন গ্রন্থে এর উলেস্নখ আছে। এই গাছটি বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়।

শরীরে কোথাও ফুলে গেলে পাতা বেটে অল্প গরম করে ফোলায় লাগালে, ফোলা কমে যায়। আঘাতজনিত ফোলায় পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালেও ব্যথা কমে যায়। রিউম্যাটিক বাতে রেড়ির (বেন্ডা) তেলের সঙ্গে পাতার রস মিশিয়ে গরম করে গাঁটে লাগাতে হয়। বিষাক্ত পোকার কামড়ে পাতার রস লাগালে জ্বালা এবং ফোলা কমে যায়। টাইফয়েড জ্বরে পাতার রস গরম করে, ছেঁকে নিয়ে পানি মিশিয়ে খাওয়ানোর নিয়ম আছে। ফ্যারিঞ্জাইটিস রোগে পাতার রস অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করা। একজিমার জায়গায় পাতার রস লাগানো হয়। দাঁতের মাড়ি ফোলায় এই গাছের ব্যবহার রয়েছে। দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়।

জ্বর ও কাশিতে এ গাছের মূল পানির সঙ্গে ফুটিয়ে ব্যবহার করা হয়। কাটা-ছেঁড়া ও আঘাত প্রশমনে এই গাছের ব্যবহার রয়েছে। হাতিশুঁড় গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হেলিওট্রোপিয়াম ইনডিকাম। এর অর্থ ফুলগুলো সূযের্র দিকে মুখ করে রয়েছে। গাছটি বোরাজিনেসি পরিবারভুক্ত। বিজ্ঞানীরা এই গাছটির ভেষজগুণ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন। তাদের আশা, অদূরভবিষ্যতে এই গাছ থেকে নানা রোগের ওষুধ তৈরি হবে। গাছের বাঁকানো পুষ্পদন্ডে ফুটে থাকে সাদা সাদা ফুল।

সারা বছরই ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুটতে দেখা যায়। গর্ভাশয় চারখন্ডিত। ফল ও বীজ ছোট। এই উদ্ভিদে ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন এলকালয়েড্‌স ও হেলিওট্রিন নামক নানারকম জৈব উপদান পাওয়া যায়। পাতা খসখসে, একের বিপরীত অন্য পাতাটির অবস্থান। ঠান্ডা লেগে হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে বা বাগী ফোলা অর্থাৎ উরু ও তলপেটের মাঝখানে, কুচকির ডান ও বাম দিকে যে কোনো দিক ফুলে গেলে এ গাছের পাতা বেটে হালকা গরম করে আক্রান্ত জায়গায় লাগালে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়। দেহে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে লাল চাকা চাকা দাগ নিরাময়ে এর পাতার রস ব্যবহার করা হয়। কোনো কারনে চোখ টকটকে লাল হলে, কড় কড় বা খচখচ করলে- মনে হচ্ছে বালি পড়েছে। এমনটা হলে হাতিশুঁড় গাছের পাতার রস অব্যর্থ ওষুধ। সর্দি লাগলে এই হাতি শুঁড়ের পাতা ছেচে দুই চামচ পরিমাণ রস খেলে সর্দি ভালো হবে।

একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুঁড় গাছের পাতা থেঁতলে আক্রান্ত স্থানে লাগালে কিছুদিন ব্যবহারে একজিমা সেরে যাবে। টাইফয়েড রোগে এই উদ্ভিদটির পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান। এর পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভালো হয়। ব্রন হলে বা এর দাগ হয়ে গেলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সেড়ে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না। সর্দি লাগলে এই হাতি শুঁড়ের পাতা ছেচে দুই চামচ পরিমাণ রস খেলে সর্দি ভালো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে