ছোট মাছের মধ্যে পুঁটি মাছ খুবই জনপ্রিয়। পুঁটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছ। এই মাছ সাধারণত পুকুর-খাল-বিলে হয়ে থাকে। আবার, অনেকে এই মাছ বাড়ির চৌবাচ্চায়ও চাষ করে থাকেন। তবে, পুকুর বা ছোট জলাশয়ে এই মাছ খুব সহজেই চাষ করা যায়। প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের দক্ষতা, সম্পূরক খাবারের প্রতি আগ্রহ, বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকা ও অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে চাষিদের কাছে এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। আবার, খুব সহজেই যেহেতু এই মাছ চাষ করা যায় তাই পুঁটি মাছ চাষে কৃষকদের লাভও হচ্ছে ভালোই। কারণ, সুস্বাদু এই মাছের বাজার চাহিদা প্রায় সারা বছর।
বাঙালিকে বলাই হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। পুঁটি মাছে রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। মাছপ্রিয় বাঙালি তার পছন্দের রান্নার তালিকায় মাছকে দেয় রাজকীয় মর্যাদা। পুঁটি মাছ শুধু যে খেতে ভালো তা নয়, এর রয়েছ প্রচুর পুষ্টিগুণ। পুঁটি মাছে প্রাণিজ প্রোটিনে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, লো-ক্যালোরি আর ৯টি অ্যামিনো অ্যাসিড- যা হৃদরোগ, ক্যানসার, হাড়ক্ষয়, বস্নাডপ্রেশার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়। বিকাশ ঘটায় মস্তিষ্কের, অথচ ক্যালোরি বাড়ায় না। মাছ যেমন পানিতে তাজা তেমনি আপনার শরীর তাজা মাছে। তাই রোজ পাতে মাছ রাখতে পারেন। পুঁটি মাছ মানেই প্রচুর প্রোটিন আর ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের সমাহার। প্রোটিন প্রতি কোষে পুষ্টি জোগায়, রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অন্য প্রাণিজ প্রোটিনের মতো এতে খারাপ ফ্যাট থাকে না। ফলে কোলেস্টেরল বাড়ে না বরং মাছ থেকে মেলে ওমেগা-৩ ফ্যাট- যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এর মধ্যে থাকা ট্রাইগিস্নসারিড কোলেস্টেরল বাড়তে দেয় না। সঙ্গে থাকা ৯টি অ্যাসিড শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্মরণশক্তি বাড়ায়।
দেশি পুঁটি মাছ সারা বছর কম-বেশি পাওয়া গেলেও শীতকালে বেশি পাওয়া যায়। শীতের শেষে চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাছের পেটে ডিম আসতে শুরু করে- যা বর্ষাকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ডিমওয়ালা দেশি পুঁটি ও ডিম ছাড়া দেশি পুঁটি উভয়ই খুব মজার মাছ। এই মাছ নদী, হাওর, খাল-বিল ও জলাভূমিতে পাওয়া যায়। পুঁটি মাছ ভাজি বাঙালির কাছে খুব জনপ্রিয় খাবার। দেশি পুঁটি ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ। অনান্য মাছের চেয়ে এই মাছ ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ভালো রকমের। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ভরপুর এই মাছে, তাই অন্তত সপ্তাহে একদিন পাতে পুঁটি মাছ রাখা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
পুঁটি মূলত মিষ্টি জলের মাছ। এটি সাধারণত খাল-বিলে পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এই মাছকে পুকুর কিংবা ছোটখাট জলাশয়ে চাষ করা হচ্ছে। পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পুকুরের পাড় যেন সর্বদা মজবুত ও বন্যামুক্ত থাকে। এছাড়াও পুকুরে পর্যাপ্ত সূযের আলো পড়ে ও পুকুরটি যেন জলজ আগাছামুক্ত থাকে।
সাধারণত, বছরের যে কোনো সময়েই আপনি পুঁটি মাছের চাষ করতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে পুকুরে কিংবা যে কোনো ধরনের ছোটখাট জলাশয়ে পুঁটির পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে সকাল অথবা সন্ধ্যা এই দুই সময়ের যে কোনো একটি নির্বাচন করতে হবে। কারণ এ সময় তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় থাকে। তা না হলে মাছ মরে যেতে পারে। এপ্রিল-মে মাসে পুঁটি মাছ ডিম ছাড়ে। তাই এ সময় পুঁটি মাছ চাষ করা উপযোগী। বাড়িতে পুকুর কিংবা যে কোনো ধরনের ছোটখাট জলাশয়ে পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ যে কোনো নার্সারি থেকে পোনা সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি প্রাকৃতিকভাবে খাল-বিল কিংবা যে কোনো ধরনের জলাশয় থেকে পোনা সংগ্রহ করতে পারেন। তবে পোনা ছাড়ার পর আপনাকে পোনার সঠিক নিয়মে যত্ন নিতে হবে।
পুঁটিমাছ সাধারণত পুকুর ও নদীতে বছরে ২ বার ডিম দেয় বলে এদের পোনা মজুতের প্রয়োজন হয় না। পুকুরে পুঁটি চাষ করার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়ম মানতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণ কৃত পোনা ব্যাগসহ পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিবহণকৃত ব্যাগের পানি এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা একই মাত্রায় আনতে হবে। তারপর ব্যাগের মুখ খুলে পুকুরের পানি অল্প অল্প করে ব্যাগে দিতে হবে এবং ব্যাগের পানি অল্প অল্প করে পুকুরে ফেলতে হবে। ৪০-৫০ মিনিট সময় ধরে এইভাবে পোনাকে পুকুরের জলে সঙ্গে মানানসই করতে হবে।
পুঁটি মাছ চাষে আপনাকে নিয়মিত উপযুক্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে। পুঁটি মাছ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শেওলা খেয়ে থাকে। এছাড়াও পুঁটি মাছ সাধারণত সব ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তাই এদের চাষ করার ক্ষেত্রে আলাদা কোনো খাবারের প্রয়োজন হয় না। পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে পুকুরে বা জলাশয়ে সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাঝে মধ্যে ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে পানির গুণাগুণ বজায় থাকে এবং মাছের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এতে মাছের বৃদ্ধি অনেক ভালো হয়।
পুঁটি মাছ চাষে আপনাকে নিয়মিত উপযুক্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে। পুঁটি মাছ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শেওলা খেয়ে থাকে। এছাড়াও পুঁটি মাছ সাধারণত সব ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তাই এদের চাষ করার ক্ষেত্রে আলাদা কোনো খাবারের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে পুকুরে বা জলাশয়ে সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাঝে মধ্যে ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথমেই, পুকুরে রাক্ষুসে বড় মাছ দূর করতে হবে। যেমন শোল, টাকি, গজার, বোয়াল, মাগুর ইত্যাদি হলো রাক্ষুসে মাছ। এই মাছ পুঁটি মাছের পোনা খেয়ে ফেলে। তাই সর্বপ্রথম রাসায়নিক সারের মাধ্যেমে এসব মাছ দূরীভূত করতে হবে। পুকুরের বা জলাশয়ের তলদেশ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাছের যত্ন নিতে হবে। বৃষ্টির দিনে বা মেঘলা আবহাওয়ায় মাছের খাবার বেশি দেওয়া যাবে না। বাড়িতে পুকুর কিংবা যে কোনো ধরনের ছোটখাট জলাশয়ে সঠিক নিয়মে পুঁটি মাছ চাষ করলে সেখান থেকে আপনি প্রচুর পরিমাণে পুঁটি মাছ পেতে পারেন- যা আপনার পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বিপুল অর্থ পাওয়া যায়।
কথা কম কাজ বেশি। দামে কম কাজে বেশি এ রকমই একটি মহামূল্যবান মাছ হলো পুঁটি। পুঁটি মাছকে ভিটামিন খনিজ বলা হয়- কারণ ছোট্ট একটি পুঁটি মাছে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ভরপুর। একটিমাত্র মাছের মধ্যে পাওয়া যায়, তাই বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে থাকে অন্তত সপ্তাহে একদিন পাতে পুঁটি মাছ রাখা যায় তাহলে আমাদের শরীরে যাবতীয় ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হয় পুঁটি মাছ।
আমরা সবাই জানি, আমাদের শরীরে হাড় কতটা প্রয়োজন। একটি উপাদান আর যদি কোনো কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বা কার্যকারিতা কমে যায় তাহলে তার প্রভাব আমাদের শরীরের সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় এবং আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ি- তবে আমরা যদি নিয়মিত ছোট পুঁটি মাছ খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। কারণ এতে রয়েছ প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস- যার ফলে আমাদের শরীরে হাড় মজবুত রাখতে এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে।
আমরা সবাই জানি, মানবদেহের চোখের গুরুত্ব কতটা। আমাদের যদি একটি চোখ বুজে থাকে তাহলে মনে হয়, সারা পৃথিবীটা যেন আমাদের জন্য অন্ধকার। সারা পৃথিবীটি মরুভূমি- তবে বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে চোখ সব সময় যত্নশীল রাখা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। তবে বর্তমানে আমাদের প্রায় সবার চোখের নানারকম সমস্যা দেখিয়ে দিচ্ছে, চোখে ঝাপসা দেখা, ছানি পড়া, চোখ চুলকানো চোখ দিয়ে জল পড়া- তবে আমরা যদি নিয়মিত খাদ্য হিসেবে পুঁটি মাছ খাই তাহলে আমাদের চোখের সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করবে, রক্ত কোষ কে সব সময় সতেজ রাখবে; কারণে চোখের সমস্ত অসুবিধাগুলো মোটামুটি দূর হবে এ পুঁটি খেলে। পুঁটি মাছের যত গুণের কথা- কম কাজ, দামে কম, কাজে বেশি; এ রকমই একটি মহামূল্যবান মাছ হলো পুঁটি। পুঁটি মাছ কে ভিটামিনের খনিজ বলা হয়- কারণ ছোট্ট একটি পুঁটি মাছে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ভরপুর। একটিমাত্র মাছের মধ্যে পাওয়া যায়- তাই বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে থাকে অন্তত সপ্তাহে একদিন পাতে পুঁটি মাছ রাখা যায় তাহলে আমাদের শরীরে যাবতীয় ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হবে।