বাঁশখালীতে কাদায় আটকে পড়া হাতিটিকে বাঁচানো গেল না

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৭:০০

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
যায়যায়দিন

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জলদি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ঝিরির কাদায় আটকে পড়ে আহত হওয়া হাতিটিকে বাঁচানো গেল না। গত ৫ মার্চ সকালে কাদা থেকে উদ্ধারের পর দীর্ঘ ২৩ দিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেয়ার পরও শুক্রবার (২৮ মার্চ) মারা যায় হাতিটি। দীর্ঘ ২৩ দিন ধরে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী মা হাতিটিকে ওই এলাকার ঝিরির পাশেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

জলদি বন্যপ্রাণী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ৫ মার্চ ওই মা হাতিটিকে ঝিরির পাশ থেকে উদ্ধার করার পরদিন থেকে দোহাজারি সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেয়ার পর শুক্রবার দুপুরে হাতিটি মারা যায়।'

তিনি আরও বলেন, ‘২৫ মার্চ থেকেই হাতিটি মুখে খাবার নিচ্ছিল না। আমরা স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কাদায় আটকে পড়ে আহত হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় খাবার ও পানি না খাওয়ায় হাতিটি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। উদ্ধারের পর থেকে হাতিটি উঠে দাঁড়াতে না পারলেও মোটামুটি খাবার খাচ্ছিল। বন বিভাগের ১০-১২ জন কর্মী প্রতিদিন প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে পাহাড় ও ঝিরি পার হয়ে গভীর বনে গিয়ে হাতিটির পরিচর্যা করেছেন।কিন্তু তিন দিন ধরে কোন খাবার না খাওয়ায় শুক্রবার দুপুরে হাতিটি মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্ত শেষে হাতিটিকে ঝিরির পাশেই মাটি চাপা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

হাতিটির চিকিৎসা তত্ববধানের দায়িত্বে থাকা ভেটেনারি সার্জন ডা. জুলকারনাইন বলেন, 'উদ্ধারের পরদিন থেকে হাতিটিকে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ড্রাগ দেওয়া শুরু হয়। ১২ তারিখ পর্যন্ত তার শারিরীক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। একজন আন্তর্জাতিক হাতি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তাকে ড্রাগ দেওয়া বন্ধ করার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বিভিন্ন দেশের হাতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছি আমরা। তাদের পরামর্শও নিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারলাম না।'

চট্টগ্রাম বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিত ভট্টাচার্য বলেন, ‘বনে কোনো হাতি বা বড় কোনো বন্যপ্রাণী আহত হলে তাকে উদ্ধার করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। হাতিটিকে গভীর বন থেকে উদ্ধার করতে বিশেষায়িত হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হতো। আবার প্রাণীটি রাখার জন্য ভেটেরিনারি হাসপাতালের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের এসব সুবিধা নেই। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত ২৩ দিন আমাদের ১২-১৩ জন কর্মী প্রতিদিন বনের পাঁচ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে হাতিটির পরিচর্যা করেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমারা তাকে বাঁচাতে পারিনি।


যাযাদি/ এমএস