দৌলতপুরে লাইসেন্সহীন ৩৬ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ!

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫১

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

সরকারী নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে দেদারসে চলছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে লাইসেন্স বিহীন ৩৬ টি অবৈধ ইটভাটা। এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া।

ইট তৈরিতে ব্যাবহার হচ্ছে আবাদি ও সরকারি জমির মাটি, জ্বালানী হিসাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। এছাড়া এসব ইটভাটায় মাটি ও ইট পরিবহনে ব্যাবহার করা হচ্ছে শতশত অবৈধ শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি, ষ্টিয়ারিং গাড়ি। যে কারণে সড়কে দুর্ঘটনার মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য জানাগেছে, উপজেলার ইটভাটাগুলোতে জ্বালানী হিসেবে প্রতি মৌসুমে এক লাখ টনেরও বেশি কাঠ পুড়ানো হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। সরজমিনে দেখা যায় এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠের মধ্যে। এখানে নামমাত্র দু-একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকি সব গুলো চলছে কাঠ পুড়িয়ে। ইট তৈরির জন্য কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। অনেকেই আবার ইটের ভাটাতেই বসিয়েছেন কাঠ কাটার করাতকল। 

তবে, লোক দেখানো পূর্বে দু’এক জায়গায় অভিযান চালানো হলেও এবছর এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অভিযান হয়নি দৌলতপুরের ইটভাটাগুলোতে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও থানা পুলিশ কে ম্যানেজ করেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাটি কেটে তা ইটভাটায় বিক্রয় করা হচ্ছে।
এদিকে, উপজেলার স্বরুপপুর ও সাদীপুর এলাকায় ফসলের মাঠ এখন ইটভাটার দখলে। এই এলাকায় ইটের ভাটা ৮টি যার মধ্যে একটিতে কয়লার জ্বালানীর আয়োজন থাকলেও তা অব্যবহৃত। চক দৌলতপুর এলাকার রমজান আলীর দুটি ছাড়াও দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় চলছে চারটি ইটের ভাটা। সব ভাটাতেই মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র চোখে পড়ে। 

ডাংমড়কা এলাকার তিনটি ফসলের মাঠে ইটভাটা সংখ্যা চারটি। দৌলতপুর থানা থেকে রিফায়েতপুরের পথে শহিদুল ইসলাম ওলি এবং নজরুল ইসলামের দুটি ইঁভাটা রয়েছে।
রিফাইতপুর গলাকাটি এলাকায় তিনটি, বড়গাংদিয়ায় একটি, আদাবাড়িয়ায় একটি, খলিশাকুিন্ডতে একটি, কোলদিয়াড়ে একটি এবং জয়রামপুর-কল্যাণপুর এলাকায় তিনটি ইটভাটা চলছে ফসলের ক্ষেতে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটাগুলোর লাইসেন্স না থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সাদিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, তাদের আবাদি জমির চারিপাশে ইটভাটা গড়ে তোলায় সেখানে আর কোন ফসলের আবাদ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

দৌলতপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, দীর্ঘদিন ইটভাটার ধোয়ায় বাতাসে কার্বণ বৃদ্ধি পায়। এবং তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী ও নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে আমারা অভিযান পরিচালনা করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এরিমধ্যে মাদিয়া এলাকায় একটি ইঁভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শীঘ্রই অন্যান্য ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

যাযাদি/ এমএস