শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত ‘দানা’, অতি ভারী বৃষ্টির আভাস

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪০
ছবি: সংগৃহীত

পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কি.মি. ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৭টায় ৯ নং বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদফতর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দানার অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, বর্তমানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

এর আগে ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের স্বদ্বীপ উপক‚ল অতিক্রম করে। সে সময় এর গতিপথের ডানদিকেই ছিল বাংলাদেশের উপক‚ল।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় এর ওপরের বাতাসের গতিবেগ ও ভ‚পৃষ্ঠের গতির পার্থক্য বেশি থাকলে এর শক্তি কম হয়। তবে পার্থক্য কম থাকলে শক্তি বেশি হয়।

আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ডানা যদি উপক‚ল অতিক্রম করার জন্য দীর্ঘসময় নেয়, তবে এর প্রভাবও দীর্ঘসময় ধরে অনুভ‚ত হবে। আবার বাতাসের গতিবেগ তখন কেমন আছে, তার ওপরও বাংলাদেশের উপকূলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নির্ভর করবে।

উপকূল জুড়ে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি

এদিকে কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে, আর তাতেই আতঙ্ক নেমেছে উপক‚ল জুড়ে। ‘ডানা’ নামে এই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলের ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, সতর্ক অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার উপকূলবাসী বিগত বছরগুলোর দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে আবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। উপক‚লের অধিকাংশ দুর্বল এবং কাজ চলমান বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। অধিকাংশ এলাকায় বহু আগে নির্মাণ করা এখানকার বেড়িবাঁধগুলো আর পুনর্র্নিমাণ করা হয়নি। তবে এসব বাঁধ এখন আর সামাল দিতে পারছে না ঝড়-জলোচ্ছাসের ধাক্কা। জিও ব্যাগের বালুর বস্তা আর রিং বাঁধ দিয়ে কোনোরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো।

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উপকূলীয় এলাকাগুলো মধ্য কলাপাড়া উপজেলা একটি। দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে এসব এলাকা খুবই ভয়াবহ অবস্থা হয় ঘূর্ণিঝড়ের সময়।

উপকূলের চরাঞ্চল এলাকায় বসবাস করা মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে দিন পার করছে। এবং কলাপাড়া উপক‚লীয় এলাকায় বিভিন্ন বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার, দুর্যোগ এলেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এখানকার মানুষ। দুর্যোগে সাগর এবং নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দুর্বল বেড়িবাঁধ তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কলাপাড়ার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌরসভার দলনেতা মো. শফিকুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরবর্তী সময়ে আমাদের সিপিপি টিমগুলো মাঠে সর্বদা কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে উপক‚লের সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে আমরা মাইকিংয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছি।

পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান বলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে সেটি ঘনীভ‚ত হয়ে বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা এবং ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে এমন সংবাদের পরপরই আমরা জরুরি সভা ডেকেছি। এবং এই সভায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তবে আগের কয়েকটি দুর্যোগে অগ্রিম প্রস্তুতি থাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো গেছে। আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি।

হাতিয়ার সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ

এদিকে নোয়াখালী স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারাদেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চাকমা। তিনি বলেন, ৩ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত চলার সঙ্গে সঙ্গে নৌ যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বলা আছে। একই সঙ্গে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে চলতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার ভোর থেকে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সকাল পৌনে ১১টা থেকে বৃষ্টিপাত ৩০ মিনিট ভারী বৃষ্টি হয়।

জেলা আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাতে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। এ কারণে ৩ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বন্যায় বিভিন্ন সড়কে যে খাদাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোয় পানি জমে গেছে। এ ছাড়া কিছু নিচু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে খেটেখাওয়া মানুষ।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে