ভালুকায় নামছে পানির স্তর 

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৫৩

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পুকুর জলাশয় শুকিয়ে অধিকাংশ সাব মার্সিবল নলকূপের পানি বন্ধ হয়ে খাবার পানি সংকটে এলাকার মানুষ চরম দুর্ভাগে। বর্তমানে বিদ্যুতায়িত হওয়ার পর এলাকা সহ উপজলার প্রায় গ্রামই মোটর চালিত সাবমার্সিবল পানির পাম্পের প্রচলন বেড়ে গিয়েছে। 

কমছে চাপ কলের ব্যবহার। গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড তাপদাহ বয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে অধিকাংশ পানির কল পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। 

সমস্যা সারাতে লোকজন ভীড় করছেন টিউবওয়েলের দোকান আর ধারস্থ হচ্ছেন টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের। গত কয়েক বছর ধরে ভালুকা পৌর এলাকার বাসা বাড়ীতে ব্যবহৃত উপরের লেয়ার  স্থাপনকৃত চাপকল গুলি একেবারেই বন্ধ হয় যাওয়ায় ডিপ সাবমার্সিবল টিউবওয়েল ব্যবহার শুরু হয়েছে। টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের সাথে কথা বলে জানাযায় ভালুকা পৌর এলাকার মেজর ভিটা, ঢালী ভবন, তোতাখাঁর ভিটায় বর্তমান পানির আগের চেয়ে স্তর ৭০/৭৫ ফুট নীচে নেমে গেছে। ফলে উপরের লেয়ার স্থাপিত বেশীরভাগ মোটর চালিত সাবমার্সিবল পানির পাম্পগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। 

এসব সারাতে তারা দিন রাত বাসায় বাসায় কাজ করছেন। এসব কলের কোনটায় অতিরিক্ত ১০ ফুট কোনটার ২০ ফুট  পাইপ সংযাজন করে পাম্প মোটর নীচে নামিয় পানির লেয়ার স্থাপন করে পানি উঠাতে সক্ষম হচ্ছেন। যাদের ৮০ ফুটের নীচে হাউজিং রয়েছে তাদের পাম্প পানি উঠছেনা। আর যেসব সাব মার্সিবল ৮০ থেকে ১২০ ফুটের হাউজিং করে মোটর স্থাপন করা আছে শুধু মাত্র ওইসব পাম্প পানি উঠছে। কল মিস্ত্রিরা জানান যদিও চৈত্র মাস খরার কারনে প্রতি বছর তাদের কাজের চাপ বেড়ে যায় এ বছর তারা প্রচন্ড চাপে রয়েছেন। 

তারা জানায় গত ৫ বছরের মধ্য এত নীচে পানির স্তর কখনা নামেনি। এ সময় যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে পানির স্তর আরও নীচে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন পানি সংকট ব্যপক আকার ধারণ করতে পারে বল তারা আশংকা করছেন। 

ভালুকা পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিদা মুনতাছির তরফদার ও আশপাশের সাবমার্সিবল পাম্প এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই পানি উঠা বন্ধ হয়ে যায়। মিস্ত্রি আনার পর জানাগেলো সাবমার্সিবল মটরটির কয়েক ফুট নীচে পানির স্তর নেমে গেছে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায় শতকরা ৬০/৭০ টি পানির কল একই অবস্থা। স্তর নীচে নামার কারনে পানি উত্তোলন ব্যঘাত ঘটছে। যারা ১০০ থেকে ১২০ ফুট নীচে হাউজিং করে মোটর স্থাপন করেছেন তাদের কলে মোটামোটি পানি উঠছে। অনেকেই বলছেন এ অঞ্চলে বিগত বছর গুলিতে খরা মৌসুমে পানির স্তর সর্বোচ ৩০ থক ৩৫ ফুট পর্যন্ত নামলেও তা স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এ বছর ৭০ থেকে ৭৫ ফুটের নীচে পানির স্তর নেমে গেছে। কারন হিসেবে অভিজ্ঞরা বলছেন এজন্য পরিবশ বিপর্যয় একমাত্র দায়ী। 

এক সময়ের ভালুকা নদী খাল বিল পুকুর আর বড় বড় বৃক্ষের সমারোহ আদ্রতায় ভরা ছিল আবহাওয়া, জলীয় বাষ্প অনুকূল থাকায় যথা সময় বৃষ্টিপাত ও পুকুর খালবিল প্রচুর পানি থাকার কারনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক উপর অর্থাৎ ১৫/২০ ফুটর মধ্যে স্থিতাবস্থায় থাকতো। গত কয়েক বছর ধরে নির্বিচারে ছোট বড় বৃক্ষ কর্তনের ফলে ছায়াশুন্য মাটিত কেবলই বাধাহীন সূর্যের তাপদাহ আর ভরাট হওয়া পানিশুন্য পুকুর নদী খাল বিল গুলি পানিশুন্য হয়ে যেন খা খা করছে। 

অপরদিক একশ্রেণীর ভূমিদস্যুরা শিল্পপতিদের মদদপুষ্ট হয়ে স্বল্পমুল্য জলাভূমি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করে মাটি ফেলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে তাতে দেদার্সে শিল্প কারখানা স্থাপন আর পরিবেশ ধ্বংসকরছেন। যা দেখা বা প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কোন সংশ্লিষ্ট মহল। 

এছাড়া উপজলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি সেচ ব্যবহৃত গভীর নলকূপ ছাড়াও কয়েকশ মিল ফ্যাক্টরীতে শক্তিশালী গভীর নলকূপ দিয়ে দিন রাত পানি উত্তোলন করার কারন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের আরও অবনতি হচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। বর্তমানে গ্রামাঞ্চল দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের পক্ষে ৪০/৫০ হাজার টাকায় একটি সাবমার্সিবল পানির কল স্থাপন সম্ভব নয়। খরা মৌসুমে এসব মানুষের খাবার পানি অন্যের বাড়ী থেকে আনতে হয়। কারন চাপ কল কিংবা টানা কলে এখন আর পানি পাওয়া যায়না। 

খড়ার কারণে তাপদাহ অব্যাহত থাকলে খাবার পানি ও কৃষিতে সেচ কাজে ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই আশংকা করছেন। উপজলার ভরাডোবা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড চাপরবাড়ী গ্রামের হাজী নাজিম উদ্দীন খান (৯২) জানান তাঁদের প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো পুকুরটি খড়ার কারন এখন প্রতি বছর শুঁকিয়ে যায়। এতে প্রায় ১০/১৫ টি পরিবারের লেকজন গোসল করা ও গবাদি পশু সংরক্ষনের ব্যাপক সমস্যা পোহাতে হয়। 

তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে পানি পেতে ভরাট হওয়া শুকিয়ে যাওয়া পুকুর গুলি পুনঃখনন কাজে সরকারী ভাবে আর্থিক সহায়তা পেলে গ্রামের মানুষের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সহ পরিবশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।

যাযাদি/ এম