ইট ভাটায় পুড়ছে কাঠ, ঝুঁকিতে পরিবেশ
প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:১০
কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে ইটভাটায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে পোড়ানো বনের কাঠ। যে কয়েকটি ভাটা রয়েছে অধিকাংশ ইট ভাটা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, সংরক্ষিত বনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামের ভেতর দিয়ে বেপরোয়াভাবে মাটি বোঝাই ট্রাক্টর চলাচলের ফলে ধুলোয় বসতবাড়িতেও থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এতে গ্রামের পাকা সড়কগুলো দিন দিন ভেঙে নষ্ট হচ্ছে। ঈদগাঁও বাস স্টেশনের পূর্ব পার্শ্বে একটি, স্টেশনের দক্ষিন পার্শ্বে গরুর বাজার এলাকায় একটি, বাস স্টেশনের উত্তর পার্শ্বে ইসলামাবাদ খোদাই বাড়িতে দুটি, ঈদগাঁও বাজার সংলগ্ন জাগির পাড়ায় একটি, মেহের ঘোনায় একটি, জালালাবাবাদ ফরাজী পাড়ায় একটি ইসলামাবাদ বোয়ালখালীতে দুটি, চৌফলদন্ডীতে দুটিসহ প্রায় এক ডজন অবৈধ কাঠের ডিপো গড়ে উঠেছে। এসব ডিপোতে অনুমানিক তিন হাজার টন চোরাই বনজ গাছ মজুদ করা হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ঈদগাঁও উপজেলার সদর ইউনিয়নে তিনটি, ইসলামাবাদ ইউনিয়নে তিনটি, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নে একটি ও জালালাবাদ ইউনিয়নের দুটি ইট ভাটায় প্রায় এক মাস আগে থেকেই বনজ গাছ পোড়ানো হচ্ছে। এ বছরে মৌসুমের আগেই শুরু হয়েছে ইট তৈরি ও পোড়ানোর উৎসব। কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে তুলনামূলক বেশি থাকায় কয়লার পরিবর্তে এখানকার অধিকাংশ ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইট ভাটায় প্রকাশ্যে কাঠ পোড়ানোর পাশাপশি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। এতে করে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে আবাদী জমি।
পরিবেশবাদীদের মতে, কক্সবাজারের ঈদগাওতে অনেক অনুমতি বীহিন ইট ভাড়া গড়ে উঠায় পরিবেশগত ঝুকিতে রয়েছে আশপাশের এলাকা। এসব ইটভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড় কাটা মাটি, জমি কাটা এবং জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করায় ইটভাটা মালিকরা এর সুযোগ নিচ্ছেন। অভিলম্বে অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ ইট ভাটা বন্ধ করে দেয়ার জোর দাবী রইল।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত দাশ জানান, কযলা দিয়ে ইট পোডানোর কথা থাকলেও বনের কাঠ দিয়েই ইটভাটায় পোডানো হচ্ছে।সেই সাথে উপজেলার শত শত একর ফসলী জমির টপ সয়েল ইট তৈরির কাঁচা মাল মাটির জন্যে লুট করা হচ্ছে। স্কেবেটার দিয়ে ফসলী জমির উর্বর টপ সয়েল কাটা হয়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। টপ সয়েল লুন্টনের ফলে আগামী কয়েক মৌসুমে কৃষি উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার আশংকার কথা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটার ম্যানেজার জানালেন, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি ৮ হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। তা ছাড়া তারা বিভিন্ন বন থেকে সংগৃহীত কাঠ এসব ভাটায় জোগান দেন।
ইটভাটার কাজ কর্মরত আবুল বশর নামে এক শ্রমিক জানান, প্রতি বছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইটভাটায় কমপক্ষে গড়ে ৮ রাউন্ড ইট পোড়ানো হয়। একটি কাচা ইট তৈরিতে করতে মাটি লাগে ০০৮৫ ঘনফুট। একটি ভাটায় বছরে কমপক্ষে ৫০ লাখের বেশী ইট পোড়ানো হয়। প্রতিটি ইটভাটায ৪শ থেকে ৬শমণ জ্বালানি কাঠ পোডানো হয়। মুল কথা ইট ভাটা মালিকরা সিন্ডিকেট করে কতৃপক্ষকে মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করে বনের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন ঈদগাঁও রেঞ্জ কমকর্তা আনোয়ার হোসাইন খান বলেন, জনবল সংকটের কারণে চোরাই পথে বনের গাছ পাচার রোধ করা শতভাগ সম্ভব হচ্ছে না। উর্ধ্বতন অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বনের গাছ পাচার ও বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
যাযাদি/ এম