এখনো আফসোস করেন শাবানা

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:০২

মাসুম বিল্লাহ্ রাকিব
শাবানা

ঢালিউড সিনেমা জগতের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জীবন্ত কিংবদন্তি আফরোজা সুলতানা রত্না ওরফে শাবানা বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তিনি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা। তবে ক্যারিয়ারের সুসময়ে সিনেমা জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী। 

শাবানা অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। ২০০০ সালে সিনেমা ছেড়ে সপরিবার যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জননন্দিত এ অভিনেত্রী। ব্যক্তিগত কাজে মাঝে মধ্যে দেশে এলেও সিনেমা জগতের মানুষের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখেন না তিনি। 

কয়েক বছর আগে শাবানা দেশে এসেছিলেন, সেই সময় জানিয়েছিলেন তার একটা স্বপ্ন অপূর্ণ থাকার কথা। যে ইচ্ছা পূরণ না হওয়ায় এখনো আফসোস করেন অভিনেত্রী। 
শাবানা বলেন, সুভাষ দত্ত আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। তিনি বলতেন, তোমার মুখের আদলটা বেগম রোকেয়ার মতো। তার কথা শুনে মনে মনে খুবই খুশি হয়েছিলাম। কারণ এমন একজন নারীর সঙ্গে আমার তুলনা করেছেন বিখ্যাত এ নির্মাতা, এটা দ্বিগুণ আনন্দের বিষয়। 

অভিনেত্রী বলেন, সুভাষ দত্ত আরও বলেছিলেন, আমি বেগম রোকেয়াকে নিয়ে একটি সিনেমা বানাব, সেখানে তুমি অভিনয় করবে। আমারও ইচ্ছা হয়েছিল পর্দায় বেগম রোকেয়া হতে। ৩০ বছর আগে সেই সিনেমার শুটিং শুরুও হয়েছিল। কিন্তু শেষ হয়নি। শুটিং থমকে যায়, আর আমার বেগম রোকেয়া হওয়ার স্বপ্ন ভেসে যায়। সেই অপূর্ণ ইচ্ছা আমাকে এখনো ভাবায়, আফসোস লাগে।


জানা গেছে, ‘বেগম রোকেয়া’ নামে একটি সিনেমাটির মহরত হয়েছিল। হয়েছিল এক দিনের শুটিংও। কিন্তু সিনেমাটি আর এগোয়নি। কারণ পরিচালক সুভাষ দত্ত প্রয়াত হয়েছেন এক যুগ আগে। আর কখনই ‘বেগম রোকেয়া’ সিনেমাটি আলোর মুখ দেখবে না, সেটি স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, আফরোজা সুলতানা রত্না। সিনেমা জগতে নাম শাবানা হিসেবেই পরিচিত। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালের ৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফয়েজ চৌধুরী, যিনি একজন টাইপিস্ট ছিলেন এবং মা ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন গৃহিণী। 

শাবানা গেন্ডারিয়া হাইস্কুলে ভর্তি হলেও তার পড়ালেখা ভালো লাগত না। শাবানার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তাই ইতি ঘটে মাত্র ৯ বছর বয়সে। চলচ্চিত্রকার এহতেশাম ছিলেন অভিনেত্রীর চাচা। শাবানার বাবার খালাতো ভাই। তার মাধ্যমেই শাবানার চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে।

অভিনেত্রী ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে নতুন সুর চলচ্চিত্র দিয়ে তার সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন। পরে ১৯৬৭ সালে চকোরী চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন শাবানা। চিত্রপরিচালক এহতেশাম চকোরী সিনেমায় তার নাম শাবানা দিয়ে পর্দায় অভিষেক ঘটান। 

তিনি তার ৩৬ বছর কর্মজীবনে ২৯৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ষাট থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এ অভিনেত্রী। 

অভিনয়জীবনে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসিম, সোহেল রানার মতো অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে জুটি বেঁধে শাবানা উপহার দেন ২৯৯টি সিনেমা। 

তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে, ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখী তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙ্গার বউ’ ইত্যাদি।

২০০০ সালে রূপালী জগৎ থেকে নিজেকে আড়াল করে ফেলেন শাবানা। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অভিনয়ের জন্য ৯ বার ও প্রযোজক হিসেবে ১ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভ‚ষিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে শাবানা ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএইচকে সাদিক তার ভাশুর। সাদিক একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন।

 শাবানার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসএস প্রডাকশন্সের দেখাশোনা করতেন সাদিক। ১৯৯৭ সালে শাবানা হঠাৎ চলচ্চিত্র-অঙ্গন থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শাবানা-সাদিক দম্পতির দুই মেয়ে- সুমি ও ঊর্মি এবং এক ছেলে নাহিন।


যাযাদি/আর