অনিশ্চিত শাবনূরের দুই সিনেমা
প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:১০

অনেক বছর ধরেই অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন চিত্রনায়িকা শাবনূর।
২০২৩ সালের নভেম্বরে তিন বছর পর দেশে এসে দুই সিনেমার ঘোষণা দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। একটি আরাফাত হোসাইনের ‘রঙ্গনা’, অন্যটি চয়নিকা চৌধুরীর ‘মাতাল হাওয়া’। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি কোনো সিনেমার কাজ। দুটি সিনেমা নিয়েই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
গত বছরের এপ্রিলে রঙ্গনা দিয়ে ক্যামেরার সামনে ফিরেছিলেন শাবনূর। শেষ করেছিলেন প্রথম ধাপের শুটিং। এরপর থেকে বন্ধ সিনেমাটির কাজ। চলতি বছরের শুরুতে খবর ছড়িয়েছিল, রঙ্গনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তবে, এ ‘গুজবে’ বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন শাবনূর।
নির্মাতাও জানিয়েছিলেন, শিগগিরই শুরু হবে সিনেমার শেষ ভাগের কাজ। ব্যস ওই পর্যন্তই। এখনো সিনেমার শুটিং শুরু করতে পারেননি নির্মাতা আরাফাত হোসাইন।
এই মাসের শুরুতে এক দিনের জন্য দেশে এসেছিলেন শাবনূর। অসুস্থ মাকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যেতেই হুট করে এসেছিলেন। তবে, সিনেমা নিয়ে কোনো আপডেট জানাননি। এদিকে রঙ্গনা নিয়ে নির্মাতা আরাফাত হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতিবারই আশার কথা শোনান তিনি। তবে, ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে শুটিং, সেই উত্তর নেই তার কাছে। সিনেমাটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কিনা, প্রশ্ন উঠলেই নির্মাতা জবাব দেন, কোনো একটি চক্র ইচ্ছা করেই গুজব ছড়াচ্ছে।
এদিকে, মাতাল হাওয়া নিয়েও কোনো আশার কথা শোনাতে পারেননি নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। ঘোষণা করার সময় তিনি জানিয়েছিলেন, কোনো তাড়াহুড়ো নেই তার। সময় লাগলেও একটি ভালো কাজ উপহার দিতে চান। দেড় বছর পরেও সেখানেই আটকে আছেন তিনি। নতুন করে জানালেন, শাবনূরকে তার মতো সম্মান দিয়েই পর্দায় আনবেন তিনি, নয়তো সিনেমাটি করবেন না।
মাতাল হাওয়া নিয়ে চয়নিকা চৌধুরী ২৫ এপ্রিল ফেসবুকে যা লিখেছেন, তাতেও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। বরং এক ধরনের অনিশ্চয়তা ধরা পড়ল সিনেমাটি নিয়ে। চয়নিকা লিখেছেন, ‘অনেকে আমাকে মাতাল হাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন। মাতাল হাওয়া তার মতোই আসবে, যখন সময় হবে।
তাড়াহুড়ো করে কখনোই ভালো কিছু হয় না। অনেক আগেই আমাদের গল্প, স্ক্রিপ্ট, প্রযোজক রেডি। সিনেমাটি হলে যাওয়ার আগে কোনো ক্লিপ, ছবি, লুক কেউ দেখতে পাবে না। এমন কিছু কখনো করব নাÑ যা দেখে দর্শক হাসেন, সমালোচনা করেন, ট্রল করেন। যদি সব ঠিক থাকে, তবেই শাবনূরকে তার মতো সম্মান দিয়ে স্ক্রিনে আনব। নয়তো না।’
চয়নিকা চৌধুরী আরও জানিয়েছেন, মাতাল হাওয়ার আগে ‘সখা: দ্য সোলমেট’ নামের সিনেমার কাজ করবেন তিনি। তবে, এতে কারা অভিনয় করবেন, তা জানাননি নির্মাতা।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শাবনূর ১৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ভালোবেসে বউ আনবো’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘পৃথিবী তোমার আমার’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘আমি তোমারি’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘নারীর মন’, ‘এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে’, ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘এ মন চায় যে’, ‘ফুল নেবো না অশ্রু নেব’, ‘দিল তো পাগল’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘ভালোবাসা কারে কয়’, ‘সুন্দরী বধু’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘নসিমন’, ‘ব্যাচেলর’, ‘ফুলের মত বউ’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘দুই নয়নের আলো’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘নিরন্তর, ‘আমার প্রাণের স্বামী’ ইত্যাদি।
শাবনূর তার অভিনয়নৈপুণ্য ও স্বকীয়তা দিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। সে সময়ে প্রায় সব নায়কের সঙ্গেই জুটি বেঁধে কাজ করেছেন তিনি। তবে, সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে। সহ-শিল্পীদের মধ্যে প্রয়াত সালমান শাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল সবচেয়ে বেশি হিট।
সালমানের অকালমৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাত্র চার বছরে তিনি ও সালমান সর্বাধিক ১৪টি দর্শকনন্দিত ও ব্যবসাসফল ছবি করেছেন। এছাড়া, প্রয়াত মান্না, ওমর সানী, বাপ্পারাজ, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজ আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ, শাকিল খান, শাকিব খানের সঙ্গেও জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিনি।
শাবনূর মানেই শুধু দুর্দান্ত সিনেমা নয়, তার সঙ্গে ছিল মনে রাখার মতো একাধিক জনপ্রিয় গানও। যেমন- ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘উত্তরে ভয়ংকর জঙ্গল’, ’ও সাথী রে’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা তার অথৈ’সহ একাধিক জনপ্রিয় গান এবং সিনেমা দর্শকের মনে এতটাই জায়গা করে নিয়েছে যে, আজও মনে মনে গুন গুন করেন তারা।
বেশ কয়েক বছর পর্দায় না থাকলেও জনপ্রিয়তা কমেনি এই অভিনেত্রীর। দর্শক থেকে ভক্ত-অনুরাগীরা মুখিয়ে রয়েছেন আবারও পর্দায় তার অভিনয় দেখার জন্য।
ব্যক্তি জীবনে ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয় এবং ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন ও নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ছেলে সন্তানের মা হন। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।
যাযাদি/আর