কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঠিক পরদিন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীরবতা ভেঙে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন ‘বলিউড বাদশা’ শাহরুখ খান।
সেই সঙ্গে উঠে এসেছে তার কাশ্মীর থেকে দূরে থাকার দীর্ঘ ৪০ বছরের যন্ত্রণার গল্প। হৃদয়বিদারক সে স্মৃতি আর বর্তমানের রক্তাক্ত বাস্তবতা যেন একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে কিং খানের ভ্রমণ, ভাবনা আর প্রতিবাদকে।
দীর্ঘদিন কাশ্মীরে না যাওয়ার পেছনে একটা ব্যক্তিগত কারণ আছে-যেটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন ২০১২ সালে। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবা কাশ্মীর ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু তার মৃত্যুর পর কেমন যেন কাশ্মীরের সঙ্গে একটা আবেগঘন দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এরপর আর যাওয়া হয়নি।’
সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পেহেলগাম বা কাশ্মীরের কথা শুনলেই বাবার মুখ মনে পড়ে। আমি চাইলেও নিজেকে শক্ত করে কাশ্মীর যেতে পারিনি।’ তবে সেই নীরবতা ও দূরত্বে চিরবিচ্ছেদ ঘটালেন ২০২৪ সালে, যখন তিনি একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে কাশ্মীরে ফিরে যান। সে যাত্রায় কাশ্মীরকে আবার নতুন চোখে দেখেন তিনি।
কিন্তু এর পরই ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা-পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ মানুষ। শাহরুখ খান এ হামলার নিন্দা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘এটি একটি অমানবিক সহিংসতা।
যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে থেকে এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।’
শাহরুখ এ হামলাকে তার হৃদয়ের গভীর ক্ষত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, ‘কাশ্মীর আমার শৈশবের স্মৃতিতে ভরপুর।
সেখানে এমন রক্তপাত দেখে মন ভেঙে যায়। কল্পনাও করতে পারি না, মানুষ এতটা নির্দয় হতে পারে।’ শাহরুখ খানের এ প্রতিক্রিয়া বলিউডের বাইরেও ব্যাপক আলোড়ন তোলে। অনেকে তার ‘বাবার স্মৃতিকে সম্মান জানানোর নীরব চেষ্টা’ বলেও ব্যাখ্যা করেছেন।
একটি গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়, ‘৪০ বছর পর কাশ্মীরে ফিরে শাহরুখ খান যেন ফিরে গেছেন এক আবেগঘন সফরে, যেখানে শৈশবের স্মৃতি আর বর্তমানের বেদনাময় বাস্তবতা হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।’
এ এক যাত্রা, যেখানে পাহাড়ের নীরবতা সাক্ষী থেকেছে, একজন সন্তানের চোখের জল আর হৃদয়ের ভার। যেখানে একজন তারকা নয়, একজন মানুষ ফিরেছেন নিজের অতীতে—একজন বাবার কাছে, আর হয়তো চিরকালের জন্য কাশ্মীরের প্রেমে পড়ে গেছেন, আবার নতুন করে, অন্যভাবে।