এ সমাজে পুরুষ কোথায় প্রশ্ন অভিনেত্রী তনুশ্রীর
প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৪০ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৩:২৮
আন্তজার্তিক পুরুষ দিবসে ‘ এ সমাজে পুরুষ কোথায়? এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী তনুশ্রী সাহা। দিবসটি উপলক্ষে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন তিনি। লেখাটাটি যায়যায়দিনের পাঠকের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো।
আমাদের জীবনটাই হয়ে গেছে দিবসময়। আজ এই দিবস তো কাল সেই দিবস। এরই মাঝে আজ চলে এসেছে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে এত দিবস পালনের পক্ষে নই। কিন্তু আজ লিখতে হচ্ছে। গতকাল রাত থেকেই ইনবক্সে অনেকেই লিখেছেন, নারী দিবসে তো আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই কিন্তু পুরুষ দিবসে কেন আমাদের শুভেচ্চা জানাবেন না? এত এত মেসেজ দেখে কিছুটা বিরক্ত হলেও অবাক হইনি।
একজন অভিনেত্রী হিসাবে সমাজের নানা শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তারা আমার কাছ থেকে শুভেচ্চা চেয়েছেন। আমি অবশ্যই নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পৃথিবীর সকল পুরুষকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ সমাজে পুরুষ কোথায়? এ প্রশ্নটাও তুলে রাখলাম।
কেননা আমার কাছে পুরুষ মানে পিতা , পুরুষ মানে স্বামী, পুরুষ মানে ভাই-বন্ধু-স্বজন। কিন্তু আজকের একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি, এ সমাজে পুরুষ (মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন) কোথায়? তাঁদের সংখ্যা খুবই নঘন্য।
এত বসন্ত পার করেও জীবনে চলার পথে পুরুষ দেখেছি, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ, নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুরুষ তেমনভাবে দেখি নাই। আজকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে আমার প্রত্যাশা থাকবে, পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি পুরুষের সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকুক। তাহলেই এই সমাজে নারী-পুরুষের মধ্যে যে দূরত্ব তা সরে যাবে। একটি সমতাভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশায় যেখানে নারী-পুরুষ সমধিকার নিয়ে চলতে পারবে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গ ভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবসটি উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।
পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে।
২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো। বলা যায়, নারী দিবসের অনুরূপভাবেই দিবসটি পালিত হয়। ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস নিজের লেখায় এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, আমার সোনার বাংলাদেশে সোনার পুরুষ হোক। মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন পুরুষ থাকুক। নারীর প্রতি বিদ্বেষ, হিংসা না ছড়িয়ে নিজের পরিবারে যে নারী আছে, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। তাহলেই এ সমাজে কোনো নারী পুরুষের লালসার শিকার হবে না। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। পুরুষের শক্তি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধেই নিহিত। জয় হোক সকলের। শুভ কামনা মানবিকবোধ সম্পন্ন পুরুষদের জন্য।
যাযাদি/ এস