সবাই তো ভালবাসা চায়, কেউ পায়, কেউবা হারায়

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৫

যাযাদি ডেস্ক
ফাইল ছবি

সবাই তো ভালবাসা চায়, কেউ পায়..কেউবা হারায় সিনেমার এই গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। যাতে অভিনয় করেন শাবান-জসিম। 

ঢাকাই সিনেমার আশির দশকের দাপুটে চিত্রনায়ক জসিম। এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ভিলেন এবং পরে অ্যাকশন হিরো হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। শুরুতে মাত্র ১০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। তাকে নায়ক হিসেবে প্রথম সুযোগ দেন নন্দিত নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।  এরপর শাবানার বিপরীতে এই নায়ককে অনেকবার পর্দায় দেখা গেছে।  

শাবানার বিপরীতে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার গল্পটা কেমন ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু জানান, ‘‘একবার জসিমের বাসায় বসে আছি। জসিম বললেন, ‘ঝন্টু ভাই আমি এক্সট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় করছি। আমাকে একজন বড় পরিচালক বলেছেন, কালকে বিকালে আপনার শুটিং আছে। তিনি এফডিসিতে যেতে বলেছেন। আমি জানতে চাইলাম, আমার শট কী? তিনি জানালেন, সিনেমার নায়িকা শাবানাকে তোমার কাঁধে তুলে বসের (মেইন ভিলেন) সামনে রাখতে হবে। এটাই তোমার শট। এত বড় নায়িকাকে কাঁধে তুলবো! এটা আমার জন্য বিরাট বিষয়! পর দিন সকালে বাজারে গিয়ে তিনটি লাক্স সাবান কিনেছি। শেভ করে ভালো করে গোসল করেছি। দুপুরে আবার গোসল করেছি। যাতে করে আমার শরীর থেকে কোনো গন্ধ-টন্ধ না বের হয়।’ 

শুনে আমি বললাম, ‘আপনাকে আমি একটা সারপ্রাইজ দেব! পরশু দিন নতুন একটা সিনেমায় আপনাকে নিচ্ছি। 

আলমগীর, সুচরিতা, শাবানা এবং আপনি আছেন। চলে আসবেন।’ এরপর জসিম শুটিংয়ে এলেন। ড্রেস পরে রেডি হয়ে সে বসে আছে। শাবানা ম্যাডামকে বললাম, ‘আপনার ডায়ালগ— আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আমার প্রথম প্রেম।’ তিনি বললেন, ‘এটা ব্যাপার না। ক্যামেরা রেডি করেন। আমি ডায়ালগ দিচ্ছি। আলমগীরকে ডাকেন।’ আমি তখন জসিমকে সামনে দাঁড় করিয়ে বললাম, ‘ম্যাডাম শট দেন।’ প্রথমে শাবানা ম্যাডাম ঠিক বুঝতে পারেননি। আমার দিকে তাকালেন। আমি শাবানা ম্যাডামকে একটু পাশে নিয়ে গিয়ে বললাম, ‘ম্যাডাম, আমি আলমগীরের সঙ্গে আপনাকে রাখিনি, জসিমের সঙ্গে রেখেছি। কিন্তু বিষয়টি আপনাকে বলিনি। এটা আমার ঠিক হয়নি। আপনি যদি বলেন, আমি ‘সরি’ বলবো।’ তখন শাবানা ম্যাডাম বললেন, ‘না সরি বলার দরকার নেই চলেন!’


এদিকে শাবানার সামনে দাঁড়িয়ে জসিমও হতবাক! কারণ জসিম কিছুই জানেন না। এরপর শাবানা জসিমের হাত ধরে বললেন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ জসিম সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘এই ক্যামেরা কাট কাট! এটা ভুল হচ্ছে!’ 

আমার কাছে এসে জসিম বললেন, ‘ম্যাডাম আমারে কী কইতাছে?’ আমি বললাম, ‘চুপ থাকেন ওখানে যান।’ আমাকে টান দিয়ে ফ্লোরের বাইরে নিয়ে বললেন, ‘ভুল হইতাছে না তো!’ আমি বললাম, ‘আরে না, ভুল হচ্ছে না। এটাই। আমি তার সঙ্গে আপনাকে রেখেছি।’ শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। এ সিনেমা মুক্তির পর দারুণ হিট হয়েছিল।’’

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু জসিমকে ‘ওমর শরীফ’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে কাস্ট করেন। তারপর জসিমকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন এই নায়ক।

ঢাকাই সিনেমার অন্যতম সফল ও কালজয়ী নায়ক জসিম। আশি ও নব্বই দশকে তিনি দাপটের সঙ্গে রূপালি পর্দা মাতিয়েছেন। একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা দিয়ে নিজেকে সফল নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাকে দেশের অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার পথিকৃৎ বিবেচনা করা হয়। 

যাযাদি/ এস