মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

আ.লীগের তোষামোদকারী জ্যোতিকা জ্যোতি এখন কোথায়?

বিনোদন রিপোর্ট
  ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪২
ফাইল ছবি

অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ ও পরে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দলটির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। বর্তমানে একটি সরকারি চাকরি করছেন এই তারকা। এই চাকরি তিনি বিগত স্বৈরাচারী সরকারের তোষামোদি করেই পেয়েছেন। সেই সরকার বদল হলেও তিনি সেই চাকরিতে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বরাবরই চুপ থাকেন। তবে একটা পর্যায়ে যখন বিভিন্ন ছাত্রসহ শ্রেণিপেশার মানুষের মৃত্যু, আহত হওয়াসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদও ধংস হতে থাকে তখন তিনি সরকারের পক্ষেই ওকালতি করেন। বিটিভি কার্যালয়ে যে শিল্পীরা রাষ্ট্রীয় ভবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তার মধ্যে তিনিও ছিলেন। এজন্য আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজেবাজে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে তাকে। প্রতিনিয়ত অশ্লীল গালি ও কটাক্ষ করা হচ্ছে এই অভিনেত্রীকে।

বর্তমানে সেই ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ঘটল। টানা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওপার বাংলার তারকা অভিনেতারাও অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য সদস্যদের। কিন্তু তিনি অন্তর্বর্তী সরকার অভিনন্দন জানানো দূরের কথা উল্টো অন্তর্বর্তী সরকারকে কটাক্ষ করলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত সরকার শুরুই করল বৈষম্য দিয়ে?’

এভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কটাক্ষ করেন জ্যোতিকা জ্যোতি। দেশের পরিস্থিতি আগের তুলনায় স্বাভাবিক।

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে কটাক্ষ করে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লেখেন, ‘নতুন বাংলাদেশের প্রথম দিন। ভয়ঙ্কর ক’টা দিনের পর, বাক্স্বাধীনতার প্রথম দিনে এই লেখার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা উদ্যাপন শুরু করলাম!’

এরপরেই তিনি আসল বক্তব্যে গিয়েছেন। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ‘বৃহস্পতিবার সরকার শপথ নিয়েছে। রাষ্ট্রের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে শুধু কুরআন রাখা হয়েছে। অন্য ধর্মগ্রন্থ রাখা হয়নি! এতেই তিনি অবাক এবং বিস্মিত।’

কারণ, বরাবর দেখে এসেছেন, বাংলাদেশে যে সব অনুষ্ঠানে ধর্মগ্রন্থ রাখা করা হয়, সেখানে কুরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটকও থাকে। অথচ এ দিন কেবল একটি ধর্মগ্রন্থই রাখা হয়েছে। তার আরও যুক্তি, ব্যক্তিগতভাবে তিনি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ধর্মগ্রন্থ রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখেন না। কিন্তু যা এত দিন ধরে পালিত হয়ে আসছে, তার অন্যথাই বা ঘটবে কেন, জানতে চেয়েছেন জ্যোতিকা।

এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন জ্যোতি। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে নাকি কেঁদেছিলেন বলে দাবি করে সেই গণমাধ্যম। সেখানে জ্যোতি বলেছিলেন, দেশের পরিস্থিতি খুবই কঠিন। বাংলাদেশে এখন সংখ্যালঘুদের প্রতি অত্যাচার হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙা হচ্ছে।

মূলত তিনি বংশপরম্পরাগতভাবেই আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থক ও কর্মী জ্যোতিকা জ্যোতি। বংশপরম্পরাগত হওয়াতেই আওয়ামী লীগের বা তার সরকারের কোনো দোষই চোখে পড়ে না। দোষ চোখে পড়ে শুধু ছাত্রদের। ছাত্র আন্দোলনের। এটা সাইকোপ্যাথ না হলেও হতে পারে না। এ কারণেই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা হওয়ার পর তিনিও ক্ষুব্ধ সুরে রাজপথে নামার ডাক দিয়েছিলেন। ৩ আগস্ট রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দাবি যেহেতু এক দফায় এসে গেছে, এবার আর ধৈর্য নয়, ঘরে থাকা নয়। এবার রাস্তায় নামবে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জয় বাংলা বাহিনী, আওয়ামী লীগের রিজার্ভড ফোর্স। যারা মুজিববাদ বুকে নিয়ে শেখ হাসিনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচে আমার প্রিয় জয় বাংলার ভাই-বোনেরা রাত পোহালেই রাজপথে শুরু করো আলোর মিছিল। দেখা হবে বিজয়ে।’

জ্যোতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচের আমার প্রিয় জয় বাংলার ভাই বোনেরা, রাত পোহালেই রাজপথে শুরু করো আলোর মিছিল। দেখা হবে বিজয়ে!’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আগামী দুই বছরের জন্য জ্যোতিকে চুক্তিতে ওই পদে দায়িত্বের কথা জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) প্রবিধানমালা, ১৯৯২ এর বিধি-৩ (ঘ) অনুযায়ী অভিনয়শিল্পী ও সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি জ্যোতিকা পাল জ্যোতিকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকেন একজন। সঙ্গে থাকেন চারজন পরিচালক। তাদেরই একজন হলেন এই অভিনেত্রী। তবে কোন বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন তা এখনো জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, জ্যোতিকা জ্যোতি আয়না, নন্দিত নরকে, অনিল বাগচির একদিন, লাল মুরগির ঝুঁটিসহ অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র এবং টিভি নাটকে কাজ করেছেন। এছাড়াও সম্প্রতি তিনি গৌতম কৈরীর বঙ্গমাতা চলচ্চিত্রে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ২০০৪ সালে লাক্স-আনন্দধারা ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় সেরা দশে স্থান করে নিয়েছিলেন জ্যোতিকা জ্যোতি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে