সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

শাকিব হিরো, বুবলি তাহলে জিরো?

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২১
-ফাইল ছবি

যতই এটাকে ‘পুরুষতান্ত্রিক’ বলা হোক না কেন, এটাই চূড়ান্ত সত্য সারা পৃথিবীতিতেই সিনেমা বাণিজ্য করে নায়কের ওপর ভর করেই। আর ঢাকাই সিনেমায় বিগত কয়েক বছরে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেছে শাকিব ছাড়া অন্য কোনো নায়কের বিপরীতে অভিনয় করে কোনো নায়িকাই ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দিতে পারবেননি। ব্যবসা তো দূরের কথা সিনেমার খরচের টাকাও এনে দিতে পারবেন না। সেটা কলকাতার ইধিকা পাল, মিমি চক্রবর্তী থেকে শুরু করে বাংলাদেশে যত নায়িকাই আছেন তাদের প্রত্যেকের বিপরীতে এ সত্যটি খাটে একজন ডমিনেট করা নায়কই একটি ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যের চালকের আসনে বসেন। ফলে, শাকিব ভিন্ন অন্য নায়কের বিপরীতে একে একে যেসব নতুন নায়িকা এ ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন তারাও আর টিকতে পারছেন না।

এর প্রমাণও হাতেনাতে পাওয়া গেছে। শাকিব খানের সাবেক নায়িকা অপু বিশ্বাস যতদিন তার বিপরীতে ছিলেন ততদিন তার ছবি ব্যবসার মুখ দেখেছে। এরপর যেসব সিনেমায় তিনি অন্য নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন সে ছবি মোটেও ব্যবসা করেনি। সেটা ঈদে হোক বা ঈদের বাইরে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হোক।

ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে শাকিব খানের সিনেমা যত ব্যবসা করেছে তার ধারে কাছে অন্য কোনো নায়কের সিনেমাই আসতে পারেনি। তাহলে সেখানে নায়িকার ছবির অবস্থা কী হবে? শাকিব ছাড়া অন্য নায়ক যারা আছেন তারা অভিনয় জানেন না এমন নয়, কিন্তু তাদের সিনেমা তো শাকিব খানের কোনো সিনেমার সামনেই দাঁড়াতে পারছে না। শাকিব পরবর্তী নায়ক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করা মাসলম্যান আরিফিন শুভ থেকে শুরু করে বাপ্পী চৌধুরী, জিয়াউল রোশান, সাইমন সাদিক, মামনুন হাসান ইমন, নিরব হোসেন, সিয়াম আহমেদ কারো সিনেমাই নায়ক হিসেবে শাকিব খানের সিনেমার সামনে দাঁড়াতে পারছে না। যদিও তাদের প্রত্যেকের নামই দেশের দর্শকের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত। আবার শাকিবের সমসাময়িক কিংবা কিছু আগের নায়ক মাহফুজ আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ, রিয়াজকেও একইভাবে স্বীকার করা যায়।

এখন এই নায়করাই যদি তার নায়িকাদের নিয়ে দর্শকের সামনের নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে না পারেন তো নায়িকারা কী করবেন। ছবিটা তো আর নারীকেন্দ্রিক নয়; যে তার দায়টি নায়িকা এককভাবে নেবেন। সে জায়গায় তাদের নায়িকা হয়ে যারা অভিনয় করবেন তাদের সিনেমাটির ব্যবসা না হলে তাদের কী-ই বা দোষ? এখন বুবলী অভিনীত ছবিটি ব্যবসা না করলে নায়িকার কী দোষ? সেখানে নায়কও কি তার দায় এড়াতে পারেন?

সিনেমায় বেশ ব্যস্ততা যাচ্ছে নায়িকা শবনম বুবলীর। টানা কয়েক বছর ধরেই ঈদে তার অভিনীত সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। নায়িকাদের মধ্যে তার ছবিই সবচেয়ে বেশি মুক্তি পাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। তবে মুক্তির সংখ্যা বেশি হলেও এগুলোর মাধ্যমে একটাও ব্যবসা সফল সিনেমা দিতে পারেননি তিনি। পারবেন কোথায়, তার নায়করাও কী পারছেন তার প্রযোজককে ব্যবসা এনে দিতে?

ফলে শাকিব খানের বাইরে অন্যসব আলাদা আলাদা নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেও সেভাবে দর্শক টানতে পারেননি এ নায়িকা। এ নায়িকা না পারছেন নিজের ভাগ্য ফেরাতে না পারছেন অন্য নায়কের ভাগ্য ফেরাতে। বিপরীত থেকে এটাও তো বলা যায়, তার অন্যসব নায়কও পারছেন না বুবলীর ভাগ্য ফেরাতে। তাহলে সে ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য কীভাবে আসবে? ফলে বুবলী অভিনীত সিনেমা যেমন ব্যবসা করতে পারছে না তেমন সে ছবিতে যে নায়ক আছেন তার ছবিও ব্যবসা করতে পারছে না। এসব কারণে বাদও পড়েছেন কাজ চলতি দু’টি সিনেমা থেকে। শুধু তিনিই নন, বাদ পড়ছেন তার নায়কও।

এর ফলে, অনেকেই বলছেন, হুমকির মুখে পড়েছে বুবলীর ক্যারিয়ার। এবারের ঈদে মুক্তি পায় বুবলী অভিনীত সিনেমা ‘রিভেঞ্জ’। বহু স্বপ্ন ছিল এই ছবিটিকে ঘিরে তার পরিচালকের। অনেক ব্যবসা করবে। দর্শক প্রশংসিত হবে। নায়ক ছিলেন মাসলম্যান রোশান। দেখা গেল মুক্তির পর যারপরনাই মুখ থুবড়ে পড়েছে সিনেমাটি।

এক্ষেত্রে দর্শক বুবলী-রোশানর রসায়ন গ্রহণ করেননিÑ এমন অভিযোগ পরিচালক ইকবালের। তাই ৪০ শতাংশ কাজ করা সত্ত্বেও তার পরবর্তী সিনেমা ‘বিট্রে’ থেকে বাদ দিয়েছেন বুবলীকে। সেই সঙ্গে রোশানকেও।

এ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্তে বড় অংকের আর্থিক লোকসান জেনেও পরিচালক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ না নেওয়া ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগ তোলেন এ পরিচালক।

শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় বুবলীর ‘মায়া : দ্য লাভ’ সিনেমা। সে সিনেমার সিক্যুয়াল ‘মায়া : দ্য লাভ-২’র ৭০ শতাংশ শুটিং সম্পন্ন করেছেন বুবলী। কিন্তু হঠাৎ করেই পরিচালক জসীম উদ্দিন জাকির জানান, বুবলীকে নিয়ে আর কাজ করতে চান না। বাদ দেওয়া হচ্ছে তাকে। এমন খবর ইতোমধ্যেই সিনেমা পাড়ায় ছড়িয়ে যাওয়ায় বুবলীর ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কায় আছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। কেন বুবলীকে বাদ দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে পরিচালক জাকির বলেন, ‘মায়া : দ্য লাভ-২’ সিনেমার আর মাত্র সাত দিনের শুটিং বাকি। বাকি অংশের শুটিংয়ের জন্য বুবলীকে অনেকবার ফোন করেও তার কোনো সাড়া পাইনি। রোজার ঈদের পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়াই বাকি কাজ অন্য শিল্পীদের নিয়ে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

কিন্তু এখানে শুধু বুবলীর ছবিই ব্যবসায়িকভাবে মার খাচ্ছে এমন তো নয়। বুবলী ছাড়াও অন্য নায়িকাদের বেলায়ও একই কথা খাটে। তাদের ছবিও তো ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। ইয়ামিন হক ববির ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার কথাই ধরা যাক। এই ছবিটিও ব্যবসায়িকভাবে চরম ব্যর্থ। এ ছাড়া ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘আগন্তুক’ ছবিও সেরকমভাবে ব্যর্থ। পুজা চেরী তার অভিনয় দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন এই সত্যটি জেনেও তো বলা যায়, তার এই ছবিটিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ। প্রতি ঈদে নিয়মিত সিনেমা মুক্তি পেলেও অনেক দিন ধরেই ব্যবসা সফল হচ্ছে না পুজার সিনেমাও। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে তাই পুজা তার ক্যারিয়ারের মন্দ সময় পার করছেন বলে অনেকের ধারণা। তবে পুজা এটা মানতে নারাজ। তিনি জানিয়েছেন, সাধ্যের পুরোটা দিয়েই কাজ করেন তিনি। কিন্তু সব সময় ধামাকা নাও হতে পারে। বড় ধামাকা দেওয়ার জন্য সময় চাইলেন সবার কাছে। পুজা বলেন, ‘আমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। কখন কী হবে সেটা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেন না। আমার ওপর ভরসা রাখেন, শিগগির ধামাকা কিছু আসছে। আমি সিনেমা জগতে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে এসেছি। আমাকে সময় দেন, অবশ্যই সবাইকে ধামাকা দেব।’

কিন্তু আমাদের দেশে সেইদিন কবে আসবে যেদিন এই ‘ধামাকা’রও যোগ্য সঙ্গী নায়ক দেখা দেবে? কাজেই এসব দেখে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের এমন কোনো নায়িকাই নেই যে, একটি পুরুষকেন্দ্রিক সিনেমায় শুধু তার নারী চরিত্রে অভিনয়ের কারণে ছবি ব্যবসা করতে পারে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে