যুক্তরাজ্যে সফল ব্যবসায়ী মাফিকুর রাজা; হার না মানা অদম্য ইচ্ছায় পেয়েছেন সফলতা

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৫০ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৩২

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: যায়যায়দিন

যুক্তরাজ্যে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের মেধা ও অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মাফিকুর রাজা। দেশটির নর্থ ওয়েলসে ‘স্বপ্না গ্রুপ’ নামে প্রতিষ্টিত করেছেন নিজের একটি ব্যবসায়ীক পরিবার। আর এই প্রতিষ্ঠানেই কর্মসংস্থান হচ্ছে অসংখ্যা যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের।

মাফিকুর রাজার হার না মানা অদম্য ইচ্ছা শক্তিই তাঁকে নিয়ে গেছে এই সাফল্যের শেকড়ে। ফলে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে তিনি হয়ে উঠেছেন এক পরিচিত নাম। পাশাপাশি বাংলাদেশী ও ব্রিটিশ তরুণদের মাঝে তিনি একজন ব্যবসায়িক আইডল হিসেবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

১৯৭৬ সালে সিলেটের মৌলভী বাজারে জন্ম নেওয়া রাজ অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে লন্ডনে আসেন। শুরুতে লন্ডনের জীবন নানান চড়াই-উৎরাই দিয়ে পার হলেও, সফলতার মুখ দেখেছেন ভ্রমণ পিপাসুদের প্রিয় শহর নর্থ ওয়েলসের ক্যানারফনে এসে।

স্থানীয় বাঙালি প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩৫ বছর ধরে রাজা নিজের যোগ্যতা প্রমান করে যাচ্ছেন। তাঁর মেধা আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির ফলে অনেক ব্যর্থতা বা ভয়কে জয় করেছেন তিনি। ফলে আজ তাঁর এই জয়ের অংশীদার হতে পারছে বাংলাদেশী কমিউনিটি।

জানা যায়, যুক্তরাজ্য এসে শুরুতে তিনি পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে কাজের হাতে খড়ি হয় বাংলাদেশী একটি রেস্তোরাঁতে। সততা ও একনিষ্ঠতার সাথে কাজ করে রেস্টুরেন্ট সেক্টরে খুব অল্পসময়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলেন মাফিকুর রাজা। আর এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে স্থানান্তরিত হোন ইংল্যান্ড থেকে ওয়েলসে। ওয়েলসে এসেও কয়েক বছর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করেন রাজা।

ওয়েলস-এ অনেক কারি হাউসে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজ ১৯৯৬ সালে প্রথম ‘স্বপ্না তান্দুরি’ দিয়ে নিজের ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেন। রাজার অগাধ পরিশ্রম, সততা আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির বলে মাত্র কয়েক বছরেই পাঁচটি রেস্টুরেন্টের মালিক বনে যান তিনি। আর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর রেস্টুরেন্ট স্বপ্ন তান্দুরি ২০০৭ ও ২০১০ সালে ‘বেস্ট কারি হাউস অব ডা ইয়ার’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। পাশাপাশি মাফিকুর রাজার এই সফলতা নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত টেলিভিশন আইটিভি ছাড়াও অনেক পত্রিকা ফিচার করে।

রাজার মতে তাঁর জীবন যুদ্ধ কখনোই এতো সহজ ছিলো না। অনেক সফলতা ও ব্যর্থতায় মিশ্র তাঁর এই প্রবাস জীবন। বিশেষ করে ব্যবসায়িক জীবনের শুরুতে আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিলো তাঁকে। তারপর সময়ের পরিক্রমা এবং হার না মানার ধীর প্রকল্পই তাঁকে আজ একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

তিনি আরও জানান, বিজনেসে সফল হতে হলে হার্ড ওয়ার্ক, অভিজ্ঞতা ও ধৈর্য অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। বিষের করে অনেক সময় অনেক প্রতিকূল বা অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সামনে চলে আসে, যা আমাদের পিছনে ঠেলে নিয়ে যায়। সে সময় ধৈর্য ধরে, হাল না ছেড়ে নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে।

ব্যবসায় রাজের এই নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের কারণে ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধি হতে থাকে। ফলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বিভিন্ন টেকওয়ে, রিয়েল স্টেট্ ব্যবসা ছাড়াও হোল সেল তথা ক্যাশ এন্ড কারীর মতো নানান ব্যবসা।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাজ ২০১৬ সালে এনটিভি ইউরোপ কর্তৃক বিসনেস লিডারশিপ পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে এশিয়ান কারি অ্যাওয়ার্ড। পাশাপাশি রাজ একজন সচেতর মানুষ হিসেবে তিনি মনে করেন সমাজের প্রতি তাঁর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আর সেই অভিপ্রায় থেকে প্রতি বছর তিনি তাঁর রেস্টুরেন্টে ‘চ্যারিটি নাইট’ আয়োজন করে থাকেন। ‘চ্যারিটি নাইট’ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করেন তাঁর পরিচালিত নানা রকম সামাজিক সংঘঠন ও অনুদান মূলক কাজে।

রাজ শুরু থেকেই যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম কমিউনিটির কাজে সরাসরি ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত অর্থায়নে বাংলাদেশ ওমেন এইডস, ব্রিটেন বাংলা সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, নাসিরুদ্দিন হাফিজিয়া মাদ্রাসা, হাসন রাজা ও জোবেদা ভানু হাসপাতালের মাধ্যমে দেশের মানুষের সরাসরি সেবা করে যাচ্ছেন।

এছাড়া ইউকেতে ইসলামিক সেন্টারের উন্নয়নেও বিশেষ অবদান রাখছেন রাজা। পাশাপাশি তিনি ‘রাইট হেল্প ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে দেশে প্রতিবছর ৫০টির মত গরিব ও অসহায় পরিবারের বিবাহের কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। এছাড়া দেশেও বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ- মাদ্রাসাতে ও নিয়মিত অনুদান করে যাচ্ছেন তিনি। এবং সিলেটের মৌলভীবাজারে তাঁর নিজের নামে একটি হাসপাতাল প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন রাজা।   

 

যাযাদি/এসএস