প্রেমের বিচ্ছেদ, ঢাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:২২

ঢাবি প্রতিনিধি
পিনাক রঞ্জন সরকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পিনাক রঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। 

রাজধানীর হাতিরপুলে একটি বাসা থেকে সোমবার (২১ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ৮টায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।

পিনাক রঞ্জন সরকারের বাড়ি ময়মনসিংহের সদর উপজেলায়। ঢাবির চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগ মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি চিত্রাঙ্কন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শেখাতেন পিনাক। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সেখানে শিশু ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতেন।

পিনাক রঞ্জনের সহপাঠী অর্নব চন্দ্র দেব বলেন, সোমবার রাতে আমরা পিনাক রঞ্জনের ফেসবুকের মেসেঞ্জার নোটসে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ লেখাটি দেখতে পাই। এ নোট দেখে তার রুমমেট ও সহপাঠী জাহিদুল ইসলামকে জানাই। তখন জাহিদ তার অফিসে ছিল। সে অফিস থেকে এসে দেখে কক্ষের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। জাহিদ তাৎক্ষণিক ৯৯৯এ কল দিলে পুলিশ এসে ভেতরে প্রবেশ করে সিলিং ফ্যান থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, খবর পেয়ে সোমবার হাতিরপুল ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ৩৮৭/৫ নম্বর বাড়ির ৯ম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। 

দুই রুমের ফ্ল্যাটটিতে পিনাক এবং তার সহপাঠী জাহিদ হাসান থাকতেন। সন্ধ্যায় তার রুমমেট বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটে ঢুকে পিনাক রঞ্জনের রুমটি ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। পরবর্তীকালে থানায় খবর দিলে ওই বাসায় গিয়ে দরজা ভেঙে রুমের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, ফ্যানের হুকের সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে সে। ঝুলন্ত অবস্থা থেকে তাকে নিচে নামানো হয়।  তবে ততক্ষণে তিনি আর বেঁচে নেই।  পরে আইনি পক্রিয়া শেষে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এসআই মোহাম্মদ ইকবাল আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এক সহপাঠীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত এক মাস আগে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে।  সেই কারণে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া তার রুম থেকে একটি ডায়েরিতে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ লেখা এমন একটি নোট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনি ফেসবুকেও একই কথা লিখে পোস্ট করেছিলেন।

ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এর বাইরেও ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে, মর্গে উপস্থিত তার সহপাঠী ও রুমমেট জাহিদ হাসান জানান, সোমবার সন্ধ্যায় তিনি অফিস থেকে বাসায় ফিরে পিনাকের রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। এরপর তিনি অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের এবং প্রক্টোরিয়াল টিমকে বিষয়টি জানান এবং ৯৯৯ এর মাধ্যমে থানায় খবর দেন।

তিনি জানান, তাদেরই এক সহপাঠীর সঙ্গে পিনাকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাসখানেক আগে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপরে কয়েক দিন মন খারাপ করে থাকলেও বর্তমানে তাকে দেখে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। হঠাৎ সোমবার এ ঘটনা কি জন্য ঘটিয়েছে তা বলতে পারছি না।