ঢাবিতে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ গত বছর ছাত্রলীগের হামলা, এবার যা হল?
প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫০

গত বছরের রমজান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের কিছু শিক্ষার্থীর উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ হামলায় অন্তত সাত জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। পবিত্র রমজান মাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এমন হামলায় দেশজুড়ে শুরু হয় নিন্দার ঝড়। যদিও এ হামলার বিষয়ে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি তৎকালীন ঢাবি প্রশাসন।
সেই ঘটনার এক বছরেরও মধ্যে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি দাওয়াহ এসোসিয়েশন।
জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে ঢাবিসহ ঢাকাস্থ ১১টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। একইসাথে দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইসলামিক স্কলার, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও শিক্ষানুরাগী ব্যবসায়ী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। গত বছর ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ কর্তৃক হামলার শিকার হওয়া ছাত্রদের অভ্যর্থনা জানানো হয়।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল মাঠে পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। প্রথম পর্বে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আলোচনা উপস্থাপন করেন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ বহুল পরিচিত আমেরিকান ইসলামিক স্কলার ড. ইয়াসির ক্বাদি। দ্বিতীয়পর্বে প্রশ্নোত্তর এবং তৃতীয় পর্বে প্রোডাক্টিভ রমাদান এর উপর আলোচনা রাখেন তিনি। অনুষ্ঠানটি রাত ১০টায় শেষ হয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়াহ এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এস এম ফরহাদ।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে এরকম একটি আয়োজন করতে পারা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদ পতনের কারণে। এই কৃতিত্ব জুলাইয়ের শহীদ ও গাজী ভাইদের কারণ আত্মত্যাগের কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা, ইসলামের মহান আদর্শ একই সাথে প্রোডাক্টিভ রমাদানের উপর এরকম আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম আয়োজন করতে পারছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, উনি যেন আমাদের শহীদ ভাইদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন, গাজী ভাইদের দ্রুত সুস্থতা দান করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়াহ এসোসিয়েশন এর পরিচালক হামিদুর রশিদ জামিল বলেন, শিক্ষার্থীরা গুগল ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার আবেদন এসে যায়। এরপর আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ২ হাজার জনকে সিলেক্ট করি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি গিফট প্যাক দেয়া হয় যেখানে একটি কুরআন, নোটবুক, তিনটি বই- ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা, রমাদান প্লানার, সুবহে সাদিক ও কলম ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ভলানটিয়ার হিসেবে আমাদের সহায়তা করেছে এবং প্রোগ্রাম শেষে সবাইকে রাতের খাবার দেয়া হয়।
ছাত্রলীগের হামলার শিকার ছাত্রদের অভ্যর্থনা
অনুষ্ঠানে গত বছর ১৩ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজন প্রোডাক্টিভ রমাদান অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। এসময় হামলার শিকার হওয়া ছাত্রদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। ড. ইয়াসির ক্বাদি নিজ হাতে সবাই ফিলিস্তিনের পতাকা খচিত উত্তরীয় পরিয়ে দেন। তারা হলেন, ঢাবির আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান, শাহিনুর রহমান রাসেল, রেজওয়ান আহমেদ রিফাত, আশিক বিল্লাহ, সাকিব তূর্য, মোহাইমিন ইসলাম।
অভ্যর্থনা পরবর্তী নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন হামলার শিকার হওয়া ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ রিফাত। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, অনুভূতি কল্পনাতীত। আজকে বক্তা যেমনটা বললেন, আল্লাহ আপনাকে কখন কোন পরিস্থিতিতে রাখবে সেটা আমরা জানি না। গত বছরেরও এদিনে আমরা ইফতার পালন করতে গেলেও চিন্তা করতে হয়েছে। কিন্তু আজকে ক্যাম্পাসে এই প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে যেগুলো তখন করতে গেলে দশ থেকে বিশবার চিন্তা করতে হতো।
‘‘মানে একটা সাধারণ ইসলামী অনুষ্ঠান হোক বা ইফতারির মতো সাধারণ অনুষ্ঠানগুলোতেও বাঁধা আসতো। এটা এখন আমাদের মাঝে স্বস্তির বিষয়। কিন্তু যেটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো ধরনের একটা শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছি সেটাকে ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি এই মুক্তির স্বাদ যেন সবাই গ্রহণ করতে পারে এ বিষয়টা নিয়ে সচেষ্ট থাকত হবে।’’
হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, শাহবাগ থানা, চকবাজার থানা, লালবাগ থানা এবং বঙ্গবন্ধু টাওয়ার থাকা এবং শিববাড়ি এলাকায় থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা এ হামলায় অংশ নেয়। আমরা জানতে পারি সিরাজুল ইসলাম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারীও এই হামলায় জড়িত ছিল। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ দিই। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
যাযাদি/ এস