বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

কুয়েট  ভিসির বাসভবনে তালা : ভিসি, প্রো-ভিসি'র অপসারণে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি

খুলনা প্রতিনিধি
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:২৬
কুয়েট  ভিসির বাসভবনে তালা : ভিসি, প্রো-ভিসি'র অপসারণে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে শুক্রবার রাত ৮ টায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় ৯৮তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। এর আগে শুক্রবার দুপুরে ভিসি প্রফেসার ড. মুহাম্মদ মাছুদ, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলামের অপসারণ এবং নতুন নিয়োগের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার বিকেলে ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ শিরোনামে ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার চিত্র প্রদর্শনী করে শিক্ষার্থীরা। যাতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের কিছু শিক্ষার্থীর সহায়তায় বহিরাগতরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা চালায় তার চিত্র ফুটে ওঠে।

রক্তাক্ত কুয়েট চিত্র প্রদর্শনী শেষে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক ঘোষণায় বলেন আমাদের মুলত দাবি ছিলো ৬টা এই দাবির মধ্যে সিন্ডিকেটে কিছু কিছু দাবি কৌশলে এড়িয়ে নিজেদের মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার সাথে শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই একমত না সুতরাং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

এদিকে, রাত আটটার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসি প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ মাছুদের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের ড: মাসুদ স্যারকে (ভিসি) নাকি নির্যাতন করেছি বলে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। আমরা যথেষ্ট সম্মানের সাথে আচরণ করেছি তার শরীরে একটি টোকা দিয়েছি এমন কোন প্রমাণ বা ভিডিও কেউ দেখাতে পারবে না। তারা বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি ইতোপূর্বে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে কঠোরভাবে পালনের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মেনে চলা হচ্ছে না। তাই এ বিষয়টি প্রশাসনিক অধ্যাদেশ গুরুত্বের সাথে কার্যকর করতে হবে। তারা আরো বলেন অপপ্রচার চালানো হয়েছে প্রশাসন আমাদের পাঁচটি দাবি মেনে নিয়েছেন। অথচ এটি মিথ্যা। আমাদেরকে কেবল আশ্বস্ত করা হয়েছে। তারা যে কমিটি গঠন করেছে সে কমিটিতে সাধারণ ছাত্রদের কাউকে রাখা হয়নি। এ কমিটির প্রতি আমাদের কোন আস্থা নেই। ছাত্রদল ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা যে নৃশংস হামলা চালিয়েছে তার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি থাকার পরেও প্রশাসন নির্বিকার। এটা সাধারণ ছাত্রদের প্রতি তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। এর মাধ্যমে তারা আমাদেরকে আমাদের আন্দোলন থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ভিসি স্যারের বাসভবনে তালা ঝুলানো হয়েছে। অপরদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসার ড. মুহাম্মদ মাছুদ, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলামের অপসারণ এবং নতুন নিয়োগের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার এই চিঠি পাঠানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো চিঠিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আমরা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩ তম (জরুরী) সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্মারক নং খুপ্রবি/২৫৯/৬০ তাং ১১/৮/২০২৪ ইং মোতাবেক রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে গত ১৮/২/২০২৫ তারিখে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা কুয়েট ছাত্রদলের ফর্ম বিতরণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দেয়। উক্ত মিছিলে কুয়েট ছাত্রদলের কর্মীরা হঠাৎ মিছিলে এসে ধাক্কা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে কুয়েট ছাত্রদল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। উক্ত হামলায় কুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং চার ঘন্টা যাবৎ এই হামলা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদেরকে কোন ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই মর্মে আমরা সকল শিক্ষার্থীরা ভিসি প্রো-ভিসি’র পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করি। আল্টিমেটাম দেওয়ার পরেও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় নিম্নোক্ত কারণে ভিসির অপসারণ দাবি করা হচ্ছেঃ

# রাজনীতি মুক্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশে অপচেষ্টা জড়িত থাকা।

#১৮/২/২০২৫ ইংরেজি তারিখে ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া।

# দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার পরও ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করা।

# যথাপযুক্ত প্রমাণ থাকা সত্বেও চিহ্নিত কুয়েট ছাত্রদল এবং স্থানীয় বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে শিকার না করা।

# ভিসি’র কাছে উক্ত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত ৬ দফা দাবি পূরণের পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পরও ৬ দফা দাবি সম্পূর্ণরূপে মেনে না নেওয়া।

শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, অভিভাবকহীন ও অনিরাপদ কুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চলমান করার জন্য অতিদ্রুত নতুন ভিসি এবং প্রো- ভিসি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। যারা আমাদের পাঁচ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে অভিভাবকের দায়ভার নিবেন ।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেয় স্থানীয় বহিরাগতরাও। এ নিয়ে কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে