প্রযুক্তির অগ্রগতিই শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যেই, রুয়েট, রাবি ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মেধাবী ও তরুণ শিক্ষার্থীর স্বেচ্ছাসেবামূলক প্লাটফর্ম রাজশাহী জুনিয়র প্রোগ্রামার্স (আরজেপি) বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় 'আরজেপি হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০২৫' আয়োজন করেছে, যা তরুণ মেধাকে উদ্দীপ্ত করে আগামী দিনের প্রযুক্তির পথপ্রদর্শক তৈরি করতে সহায়ক হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানুয়ারি মাসজুড়ে রাজশাহী জুনিয়র প্রোগ্রামার্স এর উদ্যোগে রাজশাহীর ১১টি স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির ৬০০’র অধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘স্কুলভিত্তিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কর্মশালা’।
তন্মধ্য থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাইকৃত সেরা ১০০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে আয়োজিত হয় ‘আরজেপি হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০২৫’। সকাল ৯টায় একযোগে শুরু হয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও অভিভাবক মতবিনিময় সভা।
অভিভাবক মতবিনিময় সভায় অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম আহমদ। অতিথি হিসেবে ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফয়জার রহমান, রুয়েটের সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজমাইন ইয়াক্বীন সৃজন ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ তামীম।
কুইজ ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব- শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, শিক্ষকদের উত্তর। জানতে চাওয়া হয়, মানবাধিকার থাকলে রোবটাধিকার নেই কেন, মানুষের মতো কম্পিউটার আঘাত পেলে অনুভব করে কিনা, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি মানুষের গুরুত্ব কমাবে কিনা ইত্যাদি নানা মজার ও জটিল প্রশ্ন। ভালো প্রশ্ন করে শিক্ষকদের থেকে পুরস্কার জিতে নেয় শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানের মাঝে আরজেপি’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ডকুমেন্টারি উপভোগ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ডকুমেন্টারি থেকে করা প্রশ্নের উত্তর দিয়েও পুরস্কার জিতে নেয় অনেক শিক্ষার্থী। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রোবোটিকস সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় রোবোটিকস শো।
তারপর রাজশাহী জুনিয়র প্রোগ্রামার্স এর সভাপতি ও রুয়েট শিক্ষার্থী তারেক আবরারের উপস্থাপনায় শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা। অতিথি হিসেবে ছিলেন অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. ফয়জার রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. খাদেমুল ইসলাম মোল্ল্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আরজেপি এডভাইজর ড. শামীম আহমদ, রুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ও আরজেপি এডভাইজর আজমাইন ইয়াক্বীন সৃজন এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও আরজেপি এডভাইজর আব্দুল্লাহ তামিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, জ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকেই একে অন্যের পরিপূরক। ভলান্টারি কাজ হিসেবে এ ধরনের হাই স্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন দেশের মেধাবী জনসম্পদ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া অতিথিরা আরও বলেন, ছোট বয়স থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করতে হবে। গতানুগতিক মুখস্ত থেকে চিন্তাভিত্তিক সৃজনশীল কাজে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। স্কুলে থাকতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে বড় ধরনের একটি সুযোগ। তাই আরজেপি’র এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিথিরা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরজেপি’র পক্ষ থেকে অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা’র হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আরজেপি এডভাইজর ড. শামীম আহমদ।
অনুষ্ঠান পরিচালনার সময়টাতে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র ও প্রোগ্রামিং কোড যাচাইয়ে ব্যস্ত থাকে আরজেপি’র একাডেমিক টিমের স্বেচ্ছাসেবকরা। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে কুইজ ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সেরা ১২ জন শিক্ষার্থীকে মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এছাড়া সকল প্রতিযোগীকে পার্টিসিপেশন সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
এই পুরো আয়োজনজুড়ে যুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজশাহী জুনিয়র প্রোগ্রামার্স এর পক্ষ থেকে প্রতি মাসে কোনো একটি ছুটির দিনে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সেশনের আয়োজন করা হবে। আরজেপি’র সাথে যুক্ত থেকে নিয়মিত দিকনির্দেশনার মধ্যে থাকলে ও একটি জ্ঞানভিত্তিক পরিবেশ পেলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
যাযাদি/ এস