২০১৩ সালে দেশের ৩৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেরিটাইম বিষয়ক একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির।শুরু থেকে অনেক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠলেও মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে এখনো অনেক দুরত্ব রয়ে গেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যহীন বাংলাদেশের অংশ হিসেবে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া উপস্থাপন করে আসছিলো।যার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিলো অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেমিস্টার ফি কমানো,বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা।
বর্তমানে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রতি সেমিস্টার বাবদ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
যেখানে বুয়েট ৩ হাজার ৫০০, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ৫০০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ হাজার ৫০০, বুটেক্স ৪ হাজার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ৩ হাজার , যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ৫০০, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ৫০০, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ হাজার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ৫ হাজার, কুয়েট ২ হাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা।সেখানে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে ১২-১৪ হাজার টাকা।পর্যালোচনা করে দেখা যায় শুধুমাত্র বিইউপি ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির থেকে সামান্য বেশি।
বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রতি ক্রেডিট বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।সে হিসেবে প্রতি সেমিস্টারে ক্রেডিট ফি বাবদ ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়।এছাড়া পরীক্ষা ফি বাবদ পরিশোধ করতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যান্য ফি হিসেবে এডুকেশন এন্যান্সমেন্ট ফি ১ হাজার টাকা, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফি ১ হাজার টাকা, ক্লাব ফি ৩০০, গ্রেড শিট ফি ৩৫০, আইসিটি সার্ভিস ফি ৩০০, লাইব্রেরি ফি ৬০০, মেডিকেল ফি ৫০০, স্পোর্টস ফি ১২৫ ও ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট ফি ৮০০ টাকা নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বাজেট থাকলেও মাত্র দেড় কোটি টাকার অভাবে মাত্রাতিরিক্ত সেমিস্টার ফি কমছে না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিকুল ইসলাম আশিক বলেন, "ইউজিসি চাইলেই এই দেড় কোটি টাকা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দিতে পারে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্য কোনো জায়গা থেকে ব্যয় সংকোচন করতে পারে।
প্রতি সেমিস্টারে মাত্রাতিরিক্ত এই সেমিস্টার ফি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য ৫৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি আমাদের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ কম। সে হিসেবে আমরা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছি। এর দ্রুত সমাধানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন"।
এছাড়াও যাতায়াত,ক্লাব ও স্পোর্টস ফি বাবদ যে অর্থ নেয়া হচ্ছে সেগুলোর তেমন কোন সুবিধা পাচ্ছে না কেউ জানিয়ে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন,আমাদের কাছে ক্লাব ফি ও স্পোর্টস ফি বাবদ প্রতি সেমিস্টারে টাকা নেওয়া হলেও নাম মাত্র দু’একটি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্টে ছাড়া আর কোন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারিনি।এমনকি আন্তঃবিভাগ কোন টুর্নামেন্টের জন্য কতৃপক্ষের কাছে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে।খুব দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান হবে এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থী তাদের সুফল পাবে এমন আশাই ব্যক্ত করেন সকল শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য,গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন,সেমিস্টার ফি কামানো সহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।ইতিমধ্যে কতৃপক্ষের সাথে দফায় বৈঠক ও সিন্ডিকেট মিটিং থেকে আশানুরূপ সিদ্ধান্ত না আসায় আগামীকাল রবিবার (১৫ই ডিসেম্বর)ক্লাস পরিক্ষা বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
যাযাদি/ এস