বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ' পালন শেষে সকল ছাত্র সংগঠনের দ্বিতীয় আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি সংগঠন অংশগ্রহণ করেনি।
সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আস্থার সংকট, ছাত্র প্রতিনিধিত্বে একচেটিয়া উপস্থিতিসহ বিভাজনের অভিযোগ তুলেছেন।
তবে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ এই সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া আরও ৩০ সংগঠনের নেতারা অংশ নিয়েছে।
গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা পালনকারী ছাত্রসংগঠন সমূহের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা ।
এর আগে, গত ২৫ নভেম্বর ১৯টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩টি উদ্দেশ্যে জরুরি সভা করে— যেখানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করে। তবে দ্বিতীয় সভায় ওই ১৯টি সংগঠনের ৫টি অংশগ্রহণ করেনি। অন্যদিকে, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এই সভা থেকে শুরু থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির জানান, "গতকাল আমরা দেখলাম গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতোদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন, অথচ সেখানে শুধুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।"
তিনি বলেন, "এছাড়া বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, জেলা প্রশাসনে ছাত্র প্রতিনিধি নামে শুধুই এক প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে। নাম দিচ্ছে ছাত্র প্রতিনিধি, অথচ অন্যদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। বিভাজন তৈরি হচ্ছে।"
"জুলাই-আগস্টের ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) বাংলাদেশ গঠনের যে প্রত্যয়, সেটার সাথে এসব ঘটনা সাংঘর্ষিক। সেজন্য আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই সভা থেকে বিরত থাকছি," যোগ করেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব হাসান ইনাম বলেন, "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আহ্বায়িত প্রথম সর্বদলীয় মিটিংয়ে আমরা অংশ নিয়েছি। একইসাথে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহেও অংশ নিই। জাতীয় ঐক্যের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে আমরা সাড়া দিচ্ছি। কিন্তু তারা মুখে মুখে সর্বদলীয় ঐক্যের কথা বললেও, সেই আস্থা রাখার মতো দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখা যাচ্ছেনা।"
অন্যদিকে, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেছেন, "এই বৈঠক মঙ্গলবার হওয়ার কথা ছিল। অথচ আমাদের না জানিয়ে তারা সভা স্থগিত করে নিজেরাই প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে চলে আসে। কিন্তু আমাদের সবার পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা ছিল, সব ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টার সাথে বসবো এবং একটি জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠন করবো— যেখানে প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং দিকনির্দেশনা রাখবেন।"
তিনি আরও বলেন, "প্রধান উপদেষ্টা কেবলমাত্র তাদের সাথে বসলেন, এটা একটা অসম প্রতিযোগিতার সূচনা করবে। মুখে ঐক্যের আহ্বান শুধুমাত্র দায়মুক্তির মতো ব্যাপার, অন্যদের দূরে ঠেলার প্রক্রিয়া। জাতীয় ঐক্যের জন্য সবার আগে ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্য নিশ্চিতের দরকার। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, "ছাত্রদলসহ কয়েকটি দল আসেনি। আগের মিটিং থেকে ১৪টি দলে এসেছে। কী কারণে তারা আসেনি, সেটা এখন আমরা বলতে পারছিনা।"
এদিকে মিটিং শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, "আজকে গত মিটিংয়ের চেয়ে ১১টি বেশি সংগঠন এসছে, প্রায় ৩০টি। তবে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত হতে পারেননি। তাদের আলাদা একটা প্রোগ্রাম থাকার কারণে তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। তারা আমাদের সাথে একসাথে বসবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।"
ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, "জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ কিংবা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সব ছাত্রসংগঠন একমত হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির ধরণ ও শিক্ষক রাজনীতি, সিট সমস্যা, অতীত রাজনীতির নেতিবাচক দিক এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।"
এ সময় ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ বলেন, "২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলো দূষিত ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের উদ্দেশ্যে নিজেদের রূপরেখা ও প্রস্তাবনা দেবে। এরপর উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে রূপরেখা তৈরি হবে— যার ভিত্তিতে আগামীর ছাত্ররাজনীতি পরিচালিত হবে।"
যাযাদি/ এস