অতিদ্রুত আইন প্রণয়ন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনের দৃশ্যমান ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১১০ দফা দাবি জানিয়েছে ইবি শাখা ছাত্রশিবির।
শনিবার দুপুর দেড়টায় টিএসসিসি’র ১১৬ নং কক্ষে জুলাই বিপ্লবোত্তর ইবি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংগঠনের নেতারা।
এসময় সংগঠনের সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন শিবির সভাপতি এইচ এম আবু মুসা ও দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ আলী। সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবনা পেশ করেন সংগঠনটির সভাপতি এইচ এম আবু মুসা।
উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো, ইবির সাথে সংশ্লিষ্ট যেসকল ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল তাদেরকে নিশ্চিত করে একাডেমি, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, গুমের শিকার দুই শিক্ষার্থী ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসের সন্ধান এবং জড়িতদের শাস্তি, ১৬ বছরে হিজাব-নিকাব ইস্যুতে ছাত্রীদের সাথে আক্রমণাত্মক আচরণে জড়িতদের বিচার, আওয়ামী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল দুর্নীতির তথ্য ‘শ্বেতপত্র’ আকারে প্রকাশ, ফ্যাসিবাদের নামে নামকরণ যে সকল স্থাপনা ও ফলক রয়েছে তা পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল মনীষী বা জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নামে করা, নন-ক্রেডিড বাংলাদেশ স্টাডিজ কোর্সকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করে কোর্স কন্টেন্ট হিসেবে বিপ্লবের পটভূমি ও ইতিহাস পাঠ্যভুক্ত করা, আবাসিক হলগুলোতে ডোপ টেস্ট করে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত, গণরুম-গেস্টরুম কালচার বিলুপ্ত, মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন, খাবারের মান উন্নয়ন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা।
এছাড়া ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব অনুষদ অনতিবিলম্বে খুলা ও পাশাপাশি কৃষি অনুষদ বৃদ্ধি, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের জন্য বেস্ট টিচার অ্যাওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা, সেশনজট নিরসনে একাডেমি ক্যালেন্ডার বাধ্যতামূলক করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকসহ সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সকল বিভাগে ছাত্রীদের জন্য কমনরুম ও নামাজের জন্য রুম বরাদ্দ দেওয়া, র্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, সপ্তাহে সাতদিন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সকাল ৭ থেকে ১০ টা পর্যন্ত খোলা রাখা, সকল ধর্মের অনুসারীদের উপাসনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা কেন্দ্রের সামগ্রিক আধুনিকায়ন, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা, ইবির প্রশাসনিক ও একাডেমি কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করা এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ গঠন করা ইত্যাদি।
এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা বলেন, জুলাই বিপ্লবে মহান শহীদদের আত্মদান ও মূল্যবোধকে ধারণ করে নিরাপদ, আধুনিক ও নৈরাজ্যমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে উপর্যুক্ত সংস্কার প্রস্তাবনা পেশ করছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইবি শাখা। আমরা বিশ্বাস করি যে, একটি উন্নত ও সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা কেবল শিক্ষার গুণগত মান বাড়ায় না, বরং একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা- গবেষণা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে উপরোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করি। আগামীর বাংলাদেশকে সুখী- সমৃদ্ধ হিসেবে গড়তে এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে বৈষম্যহীন ও ঐক্যবদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে একদল সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা আশা করি, উল্লিখিত প্রস্তাবনাগুলোর আলোকে বৈষম্যহীন ও ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চশিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন ইবি ছাত্রশিবির।
যাযাদি/ এম