জাবিতে চারুকলা ভবন নির্মাণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান
প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা চায় মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই তাদের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেখানেই চারুকলা ভবন নির্মাণ হোক।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা সহ আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ চায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে চারুকলা ভবন নির্মাণ হোক। সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চারুকলা ভবন নির্মাণের বিপক্ষের শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷
এর আগে, দুপুর ১২ টা থেকে দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ এসময় আটকা পড়েন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা। পরে রাত ৯ টা পেরিয়ে গেলেও তারা অবরোধ তুলে না নিলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সেখানে আসেন।
সর্বশেষ রাত ১১ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকলে তাদের সমর্থন জানিয়ে শহীদ সালাম বরকত হলের শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে রেজিষ্ট্রার ভবনের সামনে আসেন। এসময় তারা 'ভারতীয় আগ্রাসন, মানি না মানব না', 'দিল্লী না ঢাকা- ঢাকা ঢাকা', 'ময়েজের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে' ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ চলবে না' প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিপক্ষের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার ভবন ত্যাগ করেন।
এসময় উপাচার্য চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সময়দান ও আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অংশীজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে চাই, যে চারুকলা ভবন কোথায় নির্মান করা হবে। আমরা আগামী ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিবো।'
এসময় জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামান বলেন, চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ময়েজ উদ্দিন কীভাবে প্রকল্প পরিচালক হয়? ভারতীয় অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ভবন নির্মাণ করা যাবে না। প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে ভবন হবে তবুও ভারতীয় অর্থায়ন চলবে না।
আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার আনজুম বলেন, চারুকলা ভবন হোক। তবে সেটি ভারতীয় অর্থায়নে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে বা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ভবন নির্মাণ হতে পারে।
ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, আমরা ভবন নির্মাণের বিপক্ষে নই। তবে প্রাণ-প্রকৃতি বিপর্যস্ত করে অপরিকল্পিত ভবন চাই না। দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং লেকের পাশেই বন উজাড় করে চারুকলা ভবন নির্মাণের স্থান পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে এসেছি। সে সময় ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে তারা ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করে। কিন্তু আমরা যৌক্তিক দাবিতে অনড় ছিলাম। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনায় বসে। সর্বশেষ গতদিনের আলোচনা সভা মূলতবী ছিল। সভায় সিদ্ধান্তের আগেই কোন কাজ শুরু করা চলবে না।
এর আগে, এ বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের বর্ধিতাংশের লেকের পাশে পরিযায়ী পাখির আবাস স্থলে দেড় শতাধিক গাছ কেটে চারুকলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তখন প্রাণপ্রকৃতি নষ্ট করে ভবন নির্মানের প্রতিবাদ জানান পরিবেশ সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই সময় ছাত্রলীগের মদদে প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ভবন নির্মাণকাজ চালিয়ে যান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে আগস্টে সরকার পতনের পর থমকে যায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অর্থায়নে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ। চলমান এ প্রকল্পে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেখানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ভারতীয় অর্থায়ন রয়েছে।
যাযাদি/এসএস