সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো এক ধরনের প্রকৌশল বিদ্যা, যা সফটওয়্যার নকশা, তৈরি, উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কাজ করে। সহজ কথায়, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হলো এমন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং, যেখানে সফটওয়্যার তৈরির পরিকল্পনা, ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, বিশ্লেষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। একটি সফটওয়্যারের সম্পূর্ণ জীবনচক্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখা হয়, তা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুমান করে যে ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি সফটওয়্যার ডেভেলপারের চাহিদা থাকবে। এই চাহিদা বৃদ্ধির কারণ হলো প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার। ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে সফটওয়্যারের উপর নির্ভর করছে। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে এআই এবং এমএল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাউড কম্পিউটিং ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে ক্লাউড ও ব্লকচেইন ভিত্তিক সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজকের ডিজিটালাইজড বিশ্বে, সফটওয়্যার আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি দিকে প্রবেশ করেছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে শুরু করে স্মার্টফোন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, এমনকি চিকিৎসা সরঞ্জাম- সর্বত্র সফটওয়্যারের ব্যবহার রয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি.এসসি ডিগ্রির চাহিদা: বাংলাদেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি.এসসি ডিগ্রির চাহিদা ক্রমবর্ধমান। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি এবং ডিজিটালাইজেশনের কারণে দেশের বিভিন্ন খাতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের আইটি শিল্প প্রসারিত হচ্ছে, দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অসংখ্য কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান ও চাহিদা বুদ্ধির কারণে বাংলাদেশি পেশাদারদের দেশী ও বৈশ্বিক প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রযুক্তি খাতের বিস্তার, স্টার্টআপ সংস্কৃতি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, উচ্চ বেতন ও সুবিধা, উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ভালো র্যাঙ্কিং ও কর্মসংস্থানের সুযোগ।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ যেসব কোর্স পড়ানো হয়: সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ানো কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে- সফটওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট অ্যানালাইসিস, স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং, অবজেক্ট-ওরিয়েন্টেড কনসেপ্টস, ডেটা স্ট্রাকচার অ্যান্ড অ্যালগরিদম, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সফটওয়্যার সিকিউরিটি, ওয়েব টেকনোলজি, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সিস্টেম অ্যানালাইসিস, মাইক্রোপ্রসেসর ও কম্পিউটার আর্কিটেকচার, ম্যালওয়্যার অ্যাটাক, ডিজাইন, সফটওয়্যার টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, অটোমেশন, সিম্যুলেশন ও মডেলিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং, ডাটা মাইনিং, ডাটা সায়েন্স, বিগডাটা, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং বিজনেস কমিউনিকেশনস।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ:
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন তৈরি, মেইনটেনেন্স এবং সফটওয়্যার পরিচালনার কাজ করে। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে:
• নতুন সফটওয়্যার তৈরি করা
• সফটওয়্যার আপডেট করা
• সফটওয়্যার বিশ্লেষণ করা
• সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিম ম্যানেজ করাসফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের অনলাইনভিত্তিক কাজের মাধ্যমে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই অন্য দেশ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে থাকে। বাংলাদেশে আউটসোর্সিংভিত্তিক বিভিন্ন কাজের পরিধি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পাশাপাশি এ খাতে বিপুলসংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা:
বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে অনার্স, মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো (কানাডা), ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (নিউজিল্যান্ড) এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় (যুক্তরাজ্য)।
কোথায় পড়ানো হয়?
বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির অধীনে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম রয়েছে। এছাড়াও তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রাম চালু রয়েছে।
গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম:
গ্রিন ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি বিএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামটি চালু করেছে। এর সিলেবাস এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে, যাতে গ্রাজুয়েটগণ বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ পান। যেমন- সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এআই ইঞ্জিনিয়ার, ওয়েব ইঞ্জিনিয়ার, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার, ফুল স্টেক ডেভেলপার, গেম ডেভেলপার, সিস্টেম বিশ্লেষক, নিরাপত্তা প্রকৌশলী, ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার এবং ডেটা সায়েন্টিস্টসহ আরও বহুবিধ পজিশনে কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামটি আধুনিক পাঠ্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রোগ্রামটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, টেস্টিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে শিখতে পারেন।
ভর্তিসহ অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন- ২২০/ডি, বেগম রোকেয়া স্মরণী, ঢাকা-১২০৭; স্থায়ী ক্যাম্পাস: পূর্বাচল আমেরিকান সিটি, কাঞ্চন, রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ। ফোন: ০১৭৫৭০৭৪৩০১, ০১৭৫৭০৭৪৩০২, ০১৭৫৭০৭৪৩০৩, ০১৭৫৭০৭৪৩০৪
যাযাদি/ এম