ইবির র্যাগিং, ছয় শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ
প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৫১
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীকে পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে র্যাগিং চলাকালীন তাদের হাতেনাতে ধরেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সোমবার মধ্যরাতে লালন হলের ৩৩০নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব খান এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া।
জানা যায়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, আরেকজনকে কল দিয়ে বাজে ভাষা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনে নাচতে বলা হয়৷ এসময় হলের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে হাতেনাতে ধরেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করেন।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর রাত এগারোটার দিকে নবীন ব্যাচের বারোজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী এন্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা৷ পরে তাদেরকে রাত আড়াই টা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়৷ এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্নো তারকাদের নাম জিগ্যেস করা হয়। কাউকে পর্নো তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয়। এসব কর্মকান্ড সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ। এদের মধ্যে ছয় শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করা হলেও পরে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে র্যাগিং চলা অবস্থায় হাতেনাতে ধরেন হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসে, হলের ৩৩০ নং রুমে র্যাগিং চলতেছে। অতঃপর আমি সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্চয় দুজন মিলে ওদেরকে র্যাগ দিচ্ছে। পরে ঘটনা জিগ্যেস করলে তারা অস্বীকার করে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা সত্যতা নিশ্চিত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।’
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, ‘আমি হলের কক্ষে ছিলাম না৷ পরে আমাকে ডাকা হয়। এসময় ভিতরে গিয়ে বান্না ভাইয়ের দেখতে পাই৷ এর আগে গতদিন মেসে জুনিয়রদের সাথে আমরা বসেছিলাম। ওদিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সকল শিক্ষকের নাম জিগ্যেস করা হয়। এসময় কেউ না পারলে তাকে একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে এসময় কারো মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয় নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান তিনি৷’
আরেক অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম লিমন প্রথমে ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করে বলেন, ‘র্যাগিংয়ের ঘটনায় আমি উপস্থিত ছিলাম। এছাড়াও স্বীকার করে বলেন ওই সময়ে শফিউল্লাহ, শরীফ শেখ শেহান, কান্ত বড়ুয়া, সাব্বির হোসেন, সঞ্চয় বড়ুয়া, মুকুল, তরিকুল সেখানে ছিলেন।’
এ বিষয়ে ইবি থানার ডিউটি অফিসার এস আই মাসুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কাছে ছয়জনকে নিয়ে এসেছে। পরে তাদেরকে থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘আপাতত তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
যাযাদি/ এস