সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ক্যাম্পেইন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিনিধি দল। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদল সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন তাঁরা। এদিকে ক্যাম্পেইন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে বারো টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এই প্রতিনিধি দল। এসময় তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৩১ দফা সম্বলিত বুকলেট, ছাত্রদলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক পুস্তিকা বিতরণ করেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: শাহাদাত হোসেন ও সোহেল রানা। তাঁরা যবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিবৃতি পেশ করেন এবং আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন।
ক্যাম্পেইনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার বলেন, আমাদের সকল কার্যক্রম হবে জনসম্মুখে। কারণ বিএনপি জবাবদিহিতার রাজনীতি করে। আমরা অবহিত আছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় আমাদের দলের কাজে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাকে বাধা দেয়ার অধিকার কারো নেই। আমরা কাউকে জোরপূর্বক দলে আনবো না। ছাত্রলীগ যে কর্মকাণ্ড করে গেছে, ছাত্রদলের কেউ যদি তা অনুসরণ করলে তার বিরুদ্ধেও যথাযথ শাস্তি নেওয়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। আমরা কোনো ত্রাসের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের এই ক্যাম্পেইনকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা লেখেন, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসে কেউ রাজনীতি প্রবেশের চেষ্টা চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে প্রশাসনকে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ কোন ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি ক্যাম্পাসে চলতে পারবে না। অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থী বলেন, যারা ইচ্ছুক তাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে। জোর করে কাউকে রাজনীতিমুখি করা খারাপ কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় যদি রাজনৈতিক চর্চা করে তাকে কেন বাধা দেওয়া হবে?
এই বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ হাসান সিফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলেও আমরা পূর্বে দেখেছি ছাত্রলীগ তাদের রাজনীতি এবং অপকর্ম চালিয়ে গেছে। জুলাইয়ের আন্দোলনের পর আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা একমত হই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ না চলে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই বিষয়ে আরো তৎপর হতে বলব যেনো তারা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত রাখতে সহায়তা করবেন। কোনো রাজনৈতিক দলই যেনো ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে প্রশাসনের কাছে আমি এই দাবিটাই করবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, জুলাইয়ের ঐতিহাসিক আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রক্ত ঝরিয়েছে, নির্যাতন সহ্য করেছে, জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। এই ত্যাগ কোনো রাজনৈতিক ফায়দা বা নেতা-নেত্রীদের সন্তুষ্টির জন্য নয় বরং শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য।আমাদের প্রত্যাশা হলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস।
ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো: মেহেদী হাসান বলেন, দেশ কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি না করে কিভাবে দেশ গড়া যায় এসব নিয়ে কথা বলেছে ছাত্রদলের প্রতিনিধিরা। এই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত নিতেই তাঁরা এসেছিলো। আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের ভালো কাজকে যেমন সাধুবাদ জানাবো তেমনি মন্দ কাজ কেও অবশ্যই ঘৃণার চোখে দেখবো এবং যথাসাধ্য প্রতিবাদ করবো। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন আছে কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নামে সাধারণ শিক্ষার্থী হয়রানি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পড়ালেখার ক্ষতি করে মিছিল মিটিং ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রতিনিধিদের প্রবেশের বিষয়ে প্রক্টর ড. মো: আমজাদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে প্রক্টর অফিস হতে কেউ লিখিত অনুমতি নেয়নি। দুপুর নাগাদ হঠাৎ জানতে পারি তাঁরা মেইন গেটের আশেপাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছে। তবে সেখানে কোনো দলীয় বা অন্য কোন ধরনের ব্যানার/পোস্টার/ প্লাকার্ড/ফেস্টুন ছিলো না। আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করেননি।
যাযাদি/ এসএম