ভর্তির দায়িত্ব নিয়ে আবু সাইফের পাশে দাঁড়ালেন রাবি ছাত্রদল

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:২৫

রাবি প্রতিনিধি
আবু সাইফ

ছোট বেলা থেকেই বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন সাইফ। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছিল সাইফের জন্য তবুও হাল ছাড়তে রাজি নয় তিনি। অষ্টম শ্রেণি থেকে টিউশন ও অন্যের জমিতে অর্থের বিনিময়ে কাজ করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের ফলে চান্স পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। তবে সেখানেও অর্থের অভাবে মেধা যুদ্ধে জয়লাভ করেও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন আবু সাইফ। 

এসময় রাবি শাখা ছাত্রদলের এক নেতার আর্থিক সহযোগিতায় ভর্তি হোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ভর্তি হয়েও দুশ্চিন্তা কাটছে না সাইফ। কিভাবে চালাবেন পড়াশোনার খরচ? টিউশন বা পার্টটাইম জবের সন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন তিনি তবে এখনো কোন সন্ধান পাননি সাইফ। তবে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন স্বপই থেকে যাবে তার?

বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সদ্য চান্সপ্রাপ্ত আবু সাইফের কথা। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার অন্তর্গত মহব্বতপুর গ্রামের খেজমত আলী ও মালেকা খাতুন দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে আবু সাইফ হলেন মেঝো। গ্রামের বুজরুক বাখই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪.৩১ পেয়ে এসএসসি ও কুমারখালি সরকারি কলেজ থেকে ৪.৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি। সাইফের বড় ভাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ফাইনাল ইয়ারে অধ্যায়নরত এবং ছোট বোন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন।

সাইফের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন রিকশাচালক। একমাত্র বাবার উপার্জন দিয়েই চলতো তাদের সংসার কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে সাইফের বাবার। দুটি ব্লকে রিং পড়ানোর ফলে তিনি আর কাজ করতে পারেন না। প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকার ঔষধ কিনতে হয় তাকে। সাইফের বড় ভাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করে বাবার চিকিৎসার খরচ ও সংসারের হাল ধরেছেন। 

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না সাইফ। বিষয়টি জানার পর রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (শফিক) তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ভর্তির শেষ দিনে সাইফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী সাহিত্য বিভাগে ভর্তি করান। 

সাইফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার পড়াশোনার খরচ তাকেই ব্যবস্থা করতে হচ্ছে ফলে ছুটি পেলেই বাড়িতে গিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করেন সাইফ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তিনি। আরবি বিভাগে পড়াশোনা করার ফলে শিক্ষার্থীদের ধারে ধারে গিয়েও টিউশন পাচ্ছেন না তিনি। আল কুরআন শুদ্ধভাবে পড়ানো থেকে শুরু করে এসএসসির সকল বিষয়ে তিনি ভালো পড়াতে পারবেন। এ বিষয়ে সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন হার না মানা এই লড়াকু সৈনিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু সাইফ বলেন, আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরেও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলাম না। শফিক ভাই বিষয়টি জানার পর আমার সাথে যোগাযোগ করে আমাকে ভর্তি করান। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।

পরিবারের অবস্থা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আমার বাবা রিকশা চালাতেন। হঠাৎ হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়ে। আমাদের চাষের জমি বিক্রি করে বাবার হার্টে রিং পড়ানো হয় ফলে আমার বাবা কোনো কাজ করতে পারে না এবং বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকে। ভাইয়ের টিউশনির টাকা দিয়ে তার নিজের খরচ, বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ ও ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ চালান। ভাইয়ের পক্ষে আমার খরচ বহন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আমার পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এখন কোন টিউশনি বা পার্ট টাইম কাজের ব্যবস্থা পেলে হয়তো আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতাম।

সকলকে আবু সাইফের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, "আর্থিক সমস্যার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছিলেন না এমন সংবাদ শোনার পর পরই আমি তার সাথে দেখা করি এবং তাকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তার জন্য আবাসিক হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারে, তাহলে আবু সাইফ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আহবান জানাই, যার যার জায়গা থেকে আমরা আবু সাইফের পাশে দাঁড়াই। আমাদের একটু সহযোগিতায় আবু সাইফ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

যাযাদি/ এসএম