‘উই আর নাহিদ’ হ্যাশট্যাগে ছেয়েছে ফেসবুক, নেপথ্যে কী?
প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া #WeAreNahid হ্যাশট্যাগে সমর্থন পাচ্ছেন। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তিনি শপথ নেন এবং বর্তমানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাত থেকে এই হ্যাশট্যাগটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, নাট্য নির্মাতা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরসহ অনেকেই এটি ব্যবহার করে নাহিদ ইসলামের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে পোস্ট দিয়েছেন।
জানা গেছে, কিছু ব্যক্তি নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সেই অপপ্রচার রুখে দেওয়ার জন্যই #WeAreNahid হ্যাশট্যাগটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি এই হ্যাশট্যাগে লিখেছেন, “ডিবি অফিসে পেছন সাইট লাল নাহিদ ভাইয়েরই হয়েছিল। ডিবি হারুনের বানানো স্ক্রিপ্ট প্যান্ট পরেও পড়তে পারেনি। লুঙ্গি পরে পেপার হাঁটুর ওপরে রেখে বানানো স্ক্রিপ্ট পড়েছিল নাহিদ ইসলাম।”
একই হ্যাশট্যাগে পোস্ট করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদও। তিনি লিখেছেন, “আজকে দেখছি নীতিহীন একটা মানুষ টকশোতে গিয়ে গলাবাজি করে গেলেন। উনি বা ওনাদের বিষয়ে আমি মাসুদ কথা বলা শুরু করলে ল্যাংটা হয়ে যাবেন। বিপ্লব কেমনে হয়েছে আমি আব্দুল হান্নান মাসউদ, আব্দুল কাদের, রিফাত রশিদ আর মাহিন সরকারের চেয়ে ভালো কেউ ব্যাখ্যা করতে পারবে না।”
মূলত আন্দোলনের সময় নাহিদ ইসলাম ও তার সহযোগীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার ছবি পোস্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, "গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অবস্থা এমনই ছিল। যারা হাসিনার পুনর্বাসন প্রকল্পকে সমর্থন করে তারা দেশকে সেই একই পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনবে, যেমন—রক্তপাত, জোরপূর্বক গুম, হত্যা এবং আরও অনেক কিছু। হাসিনা শাসনের পুনর্বাসনকে সমর্থন করলে শেষ পর্যন্ত একই বিধ্বংসী পরিণতি ঘটবে। ফ্যাসিস্টবিরোধী বাংলাদেশ নাহিদ। আমরা নাহিদ।"
নিয়োগ বিতর্ক ও নাহিদ ইসলামের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) মহাপরিচালক পদে নাহিদ ইসলামের সুপারিশসহ সই করা একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি জানান, নিয়োগপত্র ১৫ অক্টোবরের হলেও তা ২২ অক্টোবর বাতিল করা হয়েছে। নাহিদ ইসলাম জানান, "এটি অসত্য প্রচার। যারা ছবিটি পেয়েছেন তাদের কাছে বাতিলকৃত নোটিশের কথা জানা থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেছেন, "আওয়ামী বিরোধী ও আন্দোলনের পক্ষের একটি গ্রুপ এই ব্যক্তির সুপারিশ করেছিল। তবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা একাডেমিক এক্সেলেন্সি দেখে এই নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে, ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় জানার পর নিয়োগ বাতিল করা হয়।"
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন এবং অপপ্রচার
এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চলমান হল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নাহিদ ইসলামকে নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ স্লোগান দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এই স্লোগান মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হচ্ছে, নাহিদ ইসলামকে নয়।
তারা জানান, "আমরা চাই আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হোক, তাই ‘আর্মি হবে ঠিকাদার’ বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।"
উল্লেখ্য, নাহিদ ইসলামকে নিয়ে চলমান অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তার সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে গড়ে উঠেছে #WeAreNahid হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং সৃষ্টিশীল ব্যক্তি এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নাহিদের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করছেন, আর নাহিদ ইসলামের নিজস্ব বক্তব্যও এই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
যাযাদি/ এস