শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

পিতা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন সন্তানের কাঁধে হাত রেখে চলতে হয় : বিএনপিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০২
ছবি : যায়যায়দিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) "জুলাই বিপ্লবকে সমুন্নত রাখতে এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনে বিপ্লবী ছাত্রজনতার করণীয়" শীর্ষক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ই নভেম্বর) বিকাল ৩ টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নুর হোসেন হল মাঠে উক্ত ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।

এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবু সাঈদ লিওন,তারিকুল ইসলাম,সহ-সমন্বয়ক মিশুয়ালী সুহাস ও রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি আল মেহেরাজ শাহরিয়ার মিথুৃন প্রমুখ।

এসময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে যেসব শিক্ষার্থী ছিলো,তারা ফুল টাইম রাজনীতিবীদ আর পার্ট টাইম শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সুযোগ হয়েছিলো ওই সময় আমার বন্ধু বলেছিলো এখনকার শিক্ষকরা পার্ট টাইম শিক্ষক এবং ফুল টাইম রাজনীতিবীদ।আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যতজন শিক্ষক আছেন, তাদের বেশির ভাগই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত, তারা চেষ্টা করেন যাদের মাধ্যমে তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদেরকে খুশি করার। যার ফলে তাদেরকে খুশি করতে গিয়ে উনারা ভুলে যান যে উনি একজন শিক্ষক। আর এইসব কারণেই আপনাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় আজও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১থেকে ১০ এর মধ্যে নেই।

আমাদের কিছু অপরাধ আছে ৫ই আগষ্টের পূর্বে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছি, এটা আমাদের প্রথম অপরাধ। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম,গণরুম নামে যে ধরনের টর্চার সেল ছিলো ৫ই আগষ্টের পর সেগুলো আর নাই, এগুলো যে নাই এটাই আমাদের দ্বিতীয় অপরাধ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও অপরাধ তারা টেন্ডারবাজিতে জড়িত না,চাঁদাবাজিতে জড়িত না। বিদ্যমান যে রাষ্ট্র কাঠামো রয়েছে, বিদ্যমান যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত রয়েছে তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সমালোচনা করে এটি হচ্ছে তাদের সর্বোচ্চ অপরাধ৷

তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখবেন এখন বর্তমানে আইএসআই,আল-কায়দা যেভাবে ভিডিও বার্তা দেয়, ঠিক সেভাবে কোনো একটা গুপ্ত জায়গা থেকে হাসান মাহমুদকে একটা ভিডিও বার্তা দিতে দেখলাম। হাসান মাহমুদ বললো কি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারা বিএনপির সাথে কাজ করতে চায়। আপনারা যারা আছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৫ই আগষ্টের পূর্বে রাস্তায় নেমেছিলেন। কোনো কারণে আবার যদি কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার,তাদের দোষর,অনুচর পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতা কাঠামোতে অনুপ্রবেশ করে তাহলে সর্বপ্রথম যাকে টার্গেট করবে তারা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গত ১৬ বছর যেসব রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করেছে, তাদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু বর্তমানে আপনাদের এমন কি অবস্থান তৈরি হলো,যার কারণে ফ্যাসিস্ট খুনী শেখ হাসিনার দোষরও আপনাদের সাথে কাজ করার আগ্রহ জানায়।

তারা আপনাদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দদেরকে বলে আমরা হচ্ছি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আর আপনারা যারা আছেন আপনাদের সাথে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কাজ করতে কমফোর্ট প্রকাশ করে।

আমরা আরও দেখেছি, ৫ই আগষ্টের পরে একটি জেনারেশন কনফ্লিক্ট হচ্ছে। এই জেনারেশন কনফ্লিক্টে দেখতে পাচ্ছি যারা অভিজ্ঞ, যাদের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা এই তরুণ প্রজন্মের যে কৃতিত্বকে অবজ্ঞার চোখে দেখছে ৷

যেমন গত পরশু দিন বিএনপির একজন প্রতিযশা রাজনীতিবীদ মির্জা আব্বাস উনাকে আমরা বলতে শুনেছি, যদি পিতার আগে সন্তান হাঁটে তাহলে নাকি দেশ ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা বিনয়ের সাথে উনাকে প্রশ্ন করতে চাই, পিতাকে যখন গত ১৬ বছর তার রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো, পিতাকে যখন রাস্তায় নামতে দেয়া হচ্ছিলো না। তখন এই ৫ই আগষ্টে সন্তানরাই গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলো। তারা যখন গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলো মুগ্ধ,আবু সাঈদ যখন বুক পেতে দিয়েছিলো তখন রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায়নি। বরং পিতার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো৷ আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমরা জেনারেশন কনফ্লিক্টের দিকে যেতে চাই না। আপনারা যারা অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ রয়েছেন,আপনাদের অভিজ্ঞতা আর তারণ্যের যে অকুতোভয়, তাদের ভয়হীন যে মনোভাব দুইটার সংমিশ্রণে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।

তিনি মির্জা আব্বাসকে উদ্দেশ্যে বলেন, পিতা যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় তখন তরুণ সন্তানের কাঁধে হাত রেখে তার বাকী পথ চলতে হয়। সুতরাং,সন্তানকে কটাক্ষ না করে তার কাজ যেনো শক্তিশালী হয়,কাজ যেনো সুদৃঢ় হয় সেটার জন্য আপনারা পদক্ষেপ নেন এবং তাদেরকে যেনো আর কখনই কোনো ফ্যাসিস্টদের মোকাবেলা করতে না হয় সেটি করে দিয়ে যাওয়া আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আমরা দেখেছি বিএনপির যিনি প্রধান নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ১৬ বছর উনি তার চিকিৎসার অধিকার পায়নি। কিন্তু ওয়াসিম,মুগ্ধ,আবু সাঈদরা যখন রাস্তায় নেমে এসেছে,গুলির সামনে বুক চেতিয়ে দিয়েছে তখন কিন্তু আপনাদের দলের যিনি প্রধান তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। সুতরাং, আপনাদের কাছে আমরা বিনয়ের সাথে বলত চাই, অগ্রজদের সাথে অনুজের যে, পার্থক্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেই চেষ্টা বন্ধ করে দেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে