জাবিতে ১৭ সমন্বয়কের পদত্যাগ : তোলপাড়
প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ( জাবি) ১৩ জন সমন্বয়ক ও ৪ জন সহ-সমন্বয়ক একযোগে পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদত্যাগকারী সমন্বয়কেরা।
পদত্যাগকৃত সমন্বয়কেরা হলেন আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক, ঐন্দ্রিলা মজুমদার। এছাড়া পদত্যাগকৃত সহ-সমন্বয়ক হলেন জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি, সাইদুল ইসলাম।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমন্বয়কেরা বলেন, দুইটি কারণে তারা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবির কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা। দুই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারী দলের মত আচরণ ও গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিট বিরুদ্ধ কাজ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ১৩-ই জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি-এর সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সাভার এলাকায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি। গত ৫-ই আগষ্ট আমরা আমাদের কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করি। এ পুরো সময়টিতে আমরা সকলে একই লক্ষ্যে কাজ করেছি। ৯ দফার উপর ভিত্তি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। ৫-ই আগষ্টের গণ অভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, যে ৯ দফার উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছে সে ৯ দফার অন্তর্ভূক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার, এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরনের দাবিগুলোতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক প্রকার নিশ্চুপ রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে একটি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের মত ভূমিকা পালন করছে। তদুপরি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভূক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে, এই ব্যানার এখনো বজায় থাকা আন্দোলনে সর্বপেশার, সর্বস্তরের, এবং সর্বদলের মানুষের অংশ গ্রহনের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে।
এছাড়াও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ্য করা হয়, অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের উক্ত বিষয়গুলোতে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে, এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যনারকে যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করে দিতে হবে। এর পাশাপাশি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি-র কতিপয় সমন্বয়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে অক্ষমতা, সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, ও গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শামীম মোল্লার গণধোলাই ও পরবর্তীতে পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে সমন্বয়ক কমিটির একাধিক সমন্বয়কের নাম উঠে আসলেও সে ব্যপারে ব্যানার কোন ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে না পারায় আমরা সমন্বয়ক পর্ষদের ১৭ জন পদত্যাগ করছি। সমন্বয়কবৃন্দ মনে করেন, ৫-ই আগষ্টের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সর্বস্তরের, সর্বপেশার, ও সর্বমতের। কোন একজন বা দুইজন, কিংবা কোন একটি মত এই আন্দোলনের একক কৃতিত্ত্বধারী নয়। একই সাথে সহস্রাধিক শহীদ ও আহতদের রক্ত ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিসর্জনের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশ শুধু একটি গোষ্ঠির নয় বরং সকলের। গণ মানুষের মেহনত, ঘাম, ও রক্তের ফসল এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে এবং এর স্পিরিটকে লালন করতে যার যার জায়গা থেকে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাবো।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সমন্নয়কেরা গত জুলাই আন্দোলনে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আলিফ, শ্রাবন, সদ্য, নাফিসা, ইয়ামিন সহ সকল শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন । একই সাথে আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তারা।
যাযাদি/ এস