আবাসিক হলে নেতাকর্মীদের সিট না দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রভোস্টকে ডেকে নিয়ে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কলেজ অডিটোরিয়ামে সাউথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদের সঙ্গে এই হেনস্তার ঘটনাটি ঘটেছে।
পরে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিও দুটিতে ছাত্রদলের একাধিক নেতাকে দেখা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত অধিকাংশই ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের অনুসারী বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী সাউথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অডিটোরিয়ামে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেন। এসময় অডিটোরিয়ামের ভেতরে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের হতে বললেও অনেকেই বের হননি।
এসময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ধমক দিয়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদকে হেনস্তা করেছেন। পরে তিনি বের হয়ে যেতে চাইলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হাত ধরে টানাটানি করেন। এসময় উপস্থিত ছাত্রদল নেতা মো. সাজ্জাদ হোসেন জেমিন তার উদ্দেশ্যে বলেন, ৬ মাস পর কিন্তু নির্বাচন হবে। তখন হিসাবগুলো বুঝে নিয়েন।
ভিডিও দুটিতে দেখা গেছে, ঘটনার সময় ছাত্রদলের নেতারা বারবার সাউথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে হাত ধরে টানাটানি করছেন। এক পর্যায়ে মানহানির ভয়ে তাকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে দেখা যায়। এসময় উত্তেজিতভাবে তাকে হেনস্তা করতে দেখা গেছে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন মো. সাজ্জাদ হোসেন জেমিন, যিনি বর্তমানে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের ১নং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক মেসকাত হোসেন তনয়, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বর্তমান সহ-সাধারণ সম্পাদক সজীব বিশ্বাস, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বাবুকে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে সাউথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদ বলেন, আমরা ছাত্রদের আসনগুলো বিভাগীয়ভাবে ভাগ করে দিয়েছি। আমি সেখানে ছাত্রাবাস ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করেছি। এক্ষেত্রে কিছু কিছু ছাত্র হয়তো ভাবছে আমি সিট দিয়েছি। তবে এটা কলেজ প্রশাসনভিত্তিক হয়েছে।
হেনস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আমাকে একটি লিস্ট দিয়ে বলেছে, এই লিস্টে যারা আছে তাদেরকে সিট দিতে হবে। তবে আমি বলেছি সিট দেওয়ার কেউ না। যদি সিট থেকেই থাকে সেটা বিভাগ সুপারিশ করে সেই প্রক্রিয়ায় হবে। কেউ কখনো বলতে পারবে না আমি সিট দিয়েছি। তখন আমি বলি এখানে আর থাকব না। সে সময় হট্টগোল শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করে বলেন, আপনারা স্যারের সঙ্গে এমন আচরণ কেন করছেন? তারপর আমি বলেছি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব, যতদিন আমি এখানে থাকব।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহিনুর রহমান বলেন, এমন ঘটনার কথা শুনিনি। আমাদের দলীয় নির্দেশনা আছে, কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠন নিবে না।
হল প্রভোস্টকে ডেকে নিয়ে হেনস্তায় জড়িতদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জানতে চাইলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ঢাকা কলেজে হল প্রভোস্টকে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা আমরাও শুনেছি। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং এ ঘটনার কারও সামান্যতম দোষ পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ঢাকা কলেজে ৮ ছাত্রাবাস আছে। এর মধ্যে বিজয় ২৪ হল ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ এবং পশ্চিম ছাত্রাবাস সনাতন ধর্মাবলম্বী জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
সম্প্রতি মেধা ও আর্থিক অসচ্ছলতাকে প্রাধান্য দিয়ে স্ব স্ব বিভাগের ভিত্তিতে মৌখিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কলেজের ছাত্রাবাসে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দের প্রক্রিয়া চালু করেছে প্রশাসন। তবে ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দে সুষ্ঠুভাবে নীতিমালা প্রতিপালন এবং পরবর্তীতে ছাত্রাবাসের পরিবেশ পূর্বের ন্যায় ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে নীতি-বর্হিভূতভাবে পরিচালিত হওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে আজকে সাউথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আনোয়ার মাহমুদের সঙ্গে সিট না দেয়াকে কেন্দ্র করে হেনস্তার ঘটনাটি ঘটেছে।
যাযাদি/ এস