প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে এক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। মেধাবী এই তরুণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফলাফলে নিজ বিভাগের মধ্যে তৃতীয় হয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। জামায়াত ইসলামের আলোচিত এই ছাত্র সংগঠনের প্রকাশ্যে আসার ঘোষণার পরে ক্যাম্পাস জুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। সদ্য ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতূহল।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সাদিক কায়েম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে দাবি করেছেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই শিবির নেতার বাড়ি চটগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায়। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ।
প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে এক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। মেধাবী এই তরুণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফলাফলে নিজ বিভাগের মধ্যে তৃতীয় হয়েছিলেন।
আজ বিকেল তিনটার দিকে নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে সাদিক লিখেন,ফ্যাসিস্ট শোষণ শুধু ছাত্র রাজনীতি নয়, রাজনীতির সংজ্ঞাই পালটে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি থাকে না। বিরাজনীতি ফ্যাসিবাদের ভাষা।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারে অবশ্যই চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে, তা না হলে ভেস্তে যাবে আমাদের এই স্বাধীনতা। আমরা চাই ছাত্র রাজনীতির সংস্কার গবেষণা, পলিসি ডায়ালগের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়িত হোক।নতুন গণতান্ত্রিক দেশে কেউ যাতে ফের স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে সেদিকেও সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান এই শিবির নেতা।
তার এই পোস্ট মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেই পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।শেয়ার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বার।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে জামায়েত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরে ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল সবমহলে।
আওয়ামী লীগের শুরু থেকে বরাবরই দাবি করে আসছিল এ আন্দোলনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত-শিবির। যদিও ছাত্রসংগঠনটি পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এ দাবির বিরোধিতা বা সমর্থন করে কিছু বলা হয়নি
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি দাবী করা সাদিক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। সাম্প্রতিক সময়ে প্ল্যাটফর্মটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিবিরের এই শীর্ষ নেতাকে বেশ সরব দেখা গিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির প্রকাশ্যে আসা নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা মন্তব্য করছেন।
ক্যাম্পাসে সাদিক কাইয়ুম পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি এতদিন বিষয়টি কিভাবে লুকিয়ে রেখেছেন তা নিয়েও অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন হল ও অনুষদে কারা সংগঠনটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তা নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে ছাত্রশিবিরের নতুন এই আত্মপ্রকাশ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
শিবিরের প্রকাশে আসা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদল কেন্দ্রীয়ভাবে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও সংগঠনটির নেতাকর্মীরা গোপন রাজনীতি বাদ দিয়ে শিবিরের প্রকাশে আসাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তারা প্রত্যাশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ইউনিট ও হলের সব শিবির নেতাকর্মী প্রকাশ্যে এসে আগামীতে ছাত্ররাজনীতি করবেন।
এদিকে হঠাৎ করে সাদিক কায়েমের এভাবে প্রকাশ্যে আসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসা ভাসছেন সাদিক কায়েম।
নাজমুল হাসান রাসেল নামে একজন লিখেছেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চব্বিশের শহীদদের স্বপ্নের বাস্তবায়নে আমরা নতুন ছাত্ররাজনীতির জন্য একতাবদ্ধ হতে চাই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মতপার্থক্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা সকলেই এই পথে এগিয়ে যেতে পারি।’’
আলমগীর হোসেন লিখেছেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমাদের জন্য সবকিছুকে যেন আরো সহজ করে দিন। আমার মনে হয়, এই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের কোন সভাপতি সংগঠনের পদবি ব্যবহার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আবারো আলহামদুলিল্লাহ।’’
এর আগে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লাউঞ্জে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাদিক কায়েম নিজেকে ছাত্র শিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি বলে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও দেন তিনি।
ফেসবুকের ওই পোস্টে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শোষণ শুধু ছাত্ররাজনীতি নয়, রাজনীতির সংজ্ঞাই পালটে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদে কোন রাজনীতি থাকে না। বিরাজনীতি ফ্যাসিবাদের ভাষা। ফ্যাসিবাদ ছাড়া সকল বাদ, ইজম ও রাজনীতি ফ্যাসিবাদে অনুপস্থিত থাকে। ফ্যাসিবাদে কোন রাজনীতি নাই, শুধু ফ্যাসিবাদই আছে। টেন্ডারবাজি, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ফাঁসি, ধর্ষণ, রাহাজানি, দুর্নীতি এসব রাজনীতি না। এগুলি ফ্যাসিবাদ।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের গত ষোল বছরের ভয়ংকর দিনগুলো কিংবা তারও পূর্বের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো রাজনীতির প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করেছিলো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। কিন্তু চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সমস্ত ভুল ভেঙে দিয়েছে। রাজনীতি সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন সচেতনতা। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছে, “এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’’।
আমরা জানি এই স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছে রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট এবং দলের আওতামুক্ত রাজনীতি সচেতন ছাত্র-জনতা। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটানোর চেয়ে বড় রাজনীতি আর কোন রাজনীতিই না। আমরা চাই সেই রাজনীতির আদর্শে ছাত্ররাজনীতির ব্যাপক ইতিবাচক সংস্কার হবে। ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিতে মত-দ্বিমত হবে, যুক্তির পাথরে সবাই বিক্ষিপ্ত হবে, কিন্তু কোন হকিস্টিক কিংবা স্ট্যাম্প থাকবে না। কোনো গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। চব্বিশের আকাঙ্ক্ষাকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে এই ছাত্ররাজনীতি। মধুতে ভিন্নমতের কেউ চা খেলে অপর পক্ষের কেউ তেড়ে আসবে না। একাডেমিক পরিবেশে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ছাত্রসংসদ ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি।
গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমতের প্রতি থাকবে সম্মান কিন্তু কেউ যেন স্বৈরাচারী না হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে রাখতে হবে সজাগ ও পূর্ণ দৃষ্টি। এই রাজনৈতিক সংস্কারে অবশ্যই চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে, তা না হলে ভেস্তে যাবে আমাদের এই স্বাধীনতা। আমরা চাই ছাত্ররাজনীতির সংস্কার গবেষণা, পলিসি ডায়ালগের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়িত হোক। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
যাযাদি/ এস