শাবিতে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষকে শপথ পাঠ করালেন সমন্বয়করা, নেটিজেনদের নিন্দা

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৫৩

শাবি প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেনকে শিক্ষার্থীরা শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে।  এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে  নবনিযুক্ত প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেনের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠক হয়। বৈঠকের এক পর্যায়ে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান পলাশ বখতিয়ার। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমন্বয়কদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

ভাইরাল হওয়া শপথ বাক্যের ভিডিওতে দেখা যায়, শুকরিয়া যে, আমরা ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ শে জুলাইয়ের সকল শহীদদের স-স্বত্বচিত্তে স্বরণ করছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।

মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিক নির্দেশনা আমরা পেয়েছি, এবং জুলাইয়ের ছাত্র জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকব। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ও শিক্ষার্থী বান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপোষহীনভাবে নিয়োজিত থাকব। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎ কাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণের এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করব।

শপথ বাক্য পাঠ নিয়ে সাব্বির রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার স্যারদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর আপনারা কারা? ফাজলামোর একটা সীমা থাকা উচিৎ, শিক্ষকের মর্যাদা ফাজলামোর জিনিস না। রাষ্ট্র গঠনের নামে একের পর এক আইন ভঙ্গ আর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন। পাওয়ার প্রাক্টিস করতে গিয়ে নিজের বিবেক বিসর্জন দিচ্ছেন। আপনাদের এইসব নোংরা ক্ষমতা প্রদর্শনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।

মো. হাসিবুর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, পাহাড়ে আগুন জ্বলছে। আমাদের ভাইয়েরা, বোনেরা গুলি খাচ্ছে, বাসা ছেড়ে জংগলে লুকাই আছে। আর সমন্বয়ক শপথ নিয়া পরে আছেন। একটু তো সজাগ হোন। না হয় কাল আপনার পাহাড়ের বন্ধুর সামনে মুখ দেখাইতে পারবেন তো? নিজেরে মাফ করতে পারবেন তো!!

এ বিষয়ে জানতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তার কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনিযুক্ত প্রশাসকদের শপথ বাক্য পাঠ করাতে কেন্দ্রীয় কোন নির্দেশনা আছে কি না? জানতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে তাদেরও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

নতুন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি পরিকল্পিত কোনো শপথবাক্য পাঠ না। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো পরিবেশটি হয়ে পরে শোকাবহ। এ ছাড়া ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ক্ষোভ, দেশের চলমান প্রেক্ষাপট, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চ প্রত্যাশা এবং নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আবেগে আপ্লুত হওয়া ইত্যাদি পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে। ঘটনাটি যেভাবে সমালোচিত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এমনটি হয়নি।’

শপথ বাক্য পাঠ করানোর সময় প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব, শাবিপ্রবির সমন্বয়ক টিমের সদস্যদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

যাযাদি/ এসএম