বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সকল সদস্য সরাসরি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমান আছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবে। অন্যায়কারী যেই হোক দোষী প্রমান হলে তার বিচার হতেই হবে।
আজ রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির একটি কক্ষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিমিয়কালে সারজিস আলম এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, পুলিশের কোন সদস্য সরাসরি এই হত্যাকান্ডের সাথে জরিত ছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমান আছে,তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে তদন্তের মাধ্যমে মামলার মাধ্যমে হোক বা যে কোন মাধ্যমে যে প্রসেসের মাধ্যমে বিচার হওয়ার কথা সেই প্রসেসে অবশ্যই বিচার হতে হবে। কেউ একজন অতি উৎসাহী হয়ে নিজের জায়গা থেকে ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে মানে নিজেকে তুলে ধরার জন্য অন্যায় ভাবে নির্দেশের বাইরে গিয়ে অন্যায় নির্দেশ পালন করেছে, এই কাজগুলা যারা করেছে তারা অন্যায়কারী হিসেবে থাকবে। সে যদি পুলিশের হয় তাহলে পুলিশেরই, এটা আমাদের দেখার কোন সুযোগ নেই। পুলিশের যদি বিচার না হয় তাহলে রাষ্ট্রের অন্য একজনের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সে বিচারের বাইরের কেউ না। এ জন্য পুলিশের যেসব সদস্যর নাম আসছে,পুলিশ হোন বা অন্য যে কেউ হোক যে দোষী তাঁর বিচার হতে হবে। আজকে এখানে যেসব পুলিশের নাম আসছে এগুলো আপনারা মিডিয়ায় দিবেন। এরপর যদি তার উপরে কোনভাবে চাপ আসে আপনারা সাথে থাকবেন আমরা আছি। এসব কাটপিটগুলা যেভাবে দেশে হত্যাযঙ্গ ক্রিয়েট করেছে এই কালপিটগুলা যদি আবার পরবর্তীতে এই মানুষগুলোকে মানসিক ভাবে চাপে রাখে তাহলে মনে রাখবেন আপনিও কোন না কোনদিন এটার শিকার হবেন। সেদিন আপনি অসহায় হয়ে পড়বেন।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আপনারা যদি মামলা করতে চান,এ ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়,আমরা সহযোগিতা করবো।আমাদের জায়গা থেকে সব্বোচ্চটা চেষ্টা করবো। তবে একটা জিনিস শুধু খেয়াল করবেন,দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে জিনিসটা হচ্ছে,আমার শহীদ পরিবারের যে ভাইটা রয়েছে তাদেরকে ব্যবহার করে অনেকে বিভিন্ন ভাবে মামলা দিচ্ছে যেখানে কিছু নির্দোশ মানুষকে ঢোকাচ্ছে, হয়রানী করছে। কেউ কেউ এই মামলায় নাম দেওয়া নাম কাটা নিয়ে এক প্রকার টাকার ব্যবসা করছে। আপনারা শুধু এটুকু খেয়াল রাখবেন আমাদের যেসকল ভাইয়েরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের নামটি যেন অপব্যবহার না হয়। আপনারা যদি নিজেদের জায়গা থেকে এটা করতে চান আমাদের জায়গা থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো।
সারজিস আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সরকার দুটি আলাদা জায়গা। আমাদের জায়গা থেকে আমাদের দুইজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আছে তাদের মাধ্যমে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য দ্রূত প্রদক্ষিপ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক ভাইয়ের চিকিৎসার প্রয়োজন কিন্তু আর্থিক সংকট রয়েছে। আবার অনেকে রিনগ্রস্থ হয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন,ওই রিন শোধ করা প্রয়োজন। আমাদের অনেক শহীদ ভাইয়ের পরিবার রয়েছে,যে ভাই ওই পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারী ব্যক্তি ছিল। সে পরিবারে এখন একটা নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের জায়গা থেকে আমরা সব্বোর্চ্চটা করছি যত দ্রূত নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের এবং বীরের মর্যাদা দেওয়া এবং তাদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা করা। বাংলাদেশে অনেক মানুষ রয়েছে যারা সামর্থবান ব্যক্তি,যারা সহযোগিতা করতে চায়, আমরা সেইসব ব্যক্তিদের সঙ্গে আহত এবং নিহতদের কানেক্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের সামর্থ নাই কিন্তু এই মুহুর্তে যোগাযোগ করে দেওয়ার মত সুযোগ রয়েছে। সেই জায়গা থেকে আপনাদের কথাগুলো শুনে আমাদের যেটুকু করার আমরা তা চেষ্টা করবো। আর আপনাদের জায়গা থেকে আমরা কিভাবে আপনাদের সঙ্গে থাকতে পারি সন্তান হিসেবে ভাই হিসেবে সেটুকু আমাদের বলবেন,সে কথা শুনতে আমরা এসেছি।
মতবিনিময় সভায় ঢাকার ধামরাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাদ ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় নিহত রফিকের পরিবার ছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। যারা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ ১০ জনের একটি সমন্বয়ক টিম আজ রোববার সকাল ১০ টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এসে পৌছান। এরপর জেলা-উপজেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় দুই ঘন্টার আলোচনায় অংশ নেন। পরে দুপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মানিকগঞ্জের শহীদ পরিবার ও আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকেল চার টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সমন্বয়নক কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
যাযাদি/ এস