‘তুমি কে? আমি কে?, রাজাকার রাজাকার’ সেদিন কি ঘটেছিল?
প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮
‘তুমি কে? আমি কে?, রাজাকার রাজাকার’ গত ১৫ জুলাই রাতে হঠাৎ এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেসময় স্লোগানটি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করলেও এর ওপর ভর করে গতি বাড়ে আন্দোলনের।
তুমুল আলোচিত এই স্লোগানের আজ দুমাস পূর্ণ হয়েছে। যে কারণে স্লোগানটিকে স্বরণ করে এর পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্লোগাননামা শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম।
যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘তুমি কে? আমি কে?, রাজাকার রাজাকার’ এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সাহসী স্লোগান ছিল। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে বিভাজনের রাজনীতি ছিল তা এই স্লোগানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছিলে সেই রাতে। আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ সেই রাতেই ভেঙে গেছিল। অস্ত্র ও বুলেটের মাধ্যমে আরও কয়েকটা দিন টিকে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল কেবল।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ইতিহাসতো একরোখা কোনো বিষয় না। ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ ; ‘আমি নই, তুমি নই; রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানও সেই রাতে বহুবার দেওয়া হইছে। আন্দোলনে বহুস্রোত ও কন্ঠস্বর এসে মিলেছে। সবাই সবসময় এক বক্তব্য ধারণ করেছে এরকম নয়। বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ীও বক্তব্য-কর্মকৌশল বদল হইছে বহুবার। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগানও হইছে। স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষেও বহু গুণগান গাওয়া হইছে একসময়।
১৮ সালেও হাসিনা ও মুজিবের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন হইছে। পরে বুকে রাজাকার লিখে সেই আন্দোলন গতি পাইছে। একটা আন্দোলনে অনেক ডাইমেনশন থাকে এবং বহু পরস্পর বিরোধী ঘটনাও একসাথে ঘটতে পারে। এই সামগ্রিকতাকে ধারণ করেই প্রকৃত ইতিহাস রচিত হয়।
আরও লিখেছেন, রাজাকার ইস্যুটিকে পরিকল্পিতভাবে প্রাসঙ্গিক করা হয়েছিল এবং শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার প্রস্তুতি নেওয়া হইছিল। এবং তার ফলশ্রুতিতেই পরদিন মিছিলে হামলা করা হয়। আর এ আন্দোলনে যেহেতু নারী শিক্ষার্থীরা ছিল মূল শক্তি তাই মেয়েদের উপর নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়। তারপরের ঘটনা সকলেই জানেন। ফ্যাসিস্টদের শেষ রক্ষা হয়নি।
১৫ তারিখ সকালে আমাকে বহু মিডিয়া ফেস করতে হইছে রাজাকার স্লোগানের ব্যাখ্যা দিয়ে। আমার ব্যাখ্যাটি ছিল অনেকটা এরকম— রাজাকার শব্দের কোনো প্রাসঙ্গিকতা এই আন্দোলনে ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাজাকার ইস্যুর অবতারণা করেছেন এবং শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে অপমান করেছেন। প্রতিউত্তরে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে ‘রাজাকার’ বলে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে বিদ্রুপ করেছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ট্যাগ দিয়ে এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। মূলত আন্দোলনকে দমন করার জন্যই রাজাকার ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে এ বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
যাযাদি/ এস