পুরুষের অণ্ডকোষ ছাড়া কী বেঁচে থাকা সম্ভব?
প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৩
পুরুষদেহের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ অণ্ডকোষ ও অণ্ডথলি। এটি প্রজননতন্ত্রেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুক্রাণু ও টেস্টোস্টেরন হরমোন এখান থেকে উৎপাদিত হয়। গোপন এই অঙ্গের নানা রোগ ও উপসর্গ নিয়ে আমরা একদিকে যেমন উদাসীন থাকি, তেমনি সমস্যা হলে গোপনও রাখি। অন্যান্য রোগের মতো সাধারণ আলাপচারিতায় এই প্রসঙ্গগুলো আসে না। ফলে রোগ যখন জটিল আকার ধারণ করে, তখন রোগীর ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক হয়ে যায়।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পুরুষের অণ্ডকোষ দুটি বিকাশজনিত কারণে সাধারণত পেটের ভেতরে থাকে। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন ষষ্ঠ থেকে নবম মাসের মধ্যে এগুলো আস্তে আস্তে অণ্ডথলিতে নেমে আসে।
যদি জন্মের পরও এগুলো অণ্ডথলিতে না নামে, তখন সমস্যাটিকে ‘আনডিসেনডেড টেসটিস’ বা ‘ইনকমপ্লিট ডিসেনডেড টেসটিস’ বলা হয়।
অনেক সময় জেনেটিক্যাল কারণে কেউ কেউ অণ্ডকোষ ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে, আবার অনেক সময় দুর্ঘটনার জন্যও অণ্ডকোষ কর্তন করা লাগতে পারে। সেই ক্ষেত্রে জীবন ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। তবে অণ্ডকোষ না থাকার কারণে কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন: সন্তান জন্মদান করতে না পারা, শারীরিক চাহিদা না থাকা, অনেক ক্ষেত্রে মেয়েলি ব্যবহার চলে আসতে পারে (এটা বিতর্কিত মতবাদ)। কারণ, টেস্টোস্টেরন হরমোনের বেশিরভাগ উৎপাদন তখন বন্ধ হয়ে যায়।
বয়ঃসন্ধির আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে, এটি প্রাপ্তবয়স্ক যৌন অঙ্গগুলির কার্যকারিতা বিকাশে বাধা দেয়। যৌন পরিপক্কতার পর বিচ্ছেদ করা হলে, যৌন অঙ্গগুলিকে সঙ্কুচিত করে এবং কাজ করা বন্ধ করে দেয়, শুক্রাণু গঠন এবং যৌন আগ্রহ এবং আচরণ বন্ধ করে দেয়। অনেকে জিনগত ভাবে ১টি কোষ নিয়ে জন্মায়, তাদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় না। তারা স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদান সহ বাকি সব হরমোনাল পরিবর্তন ঠিকঠাক ভাবে হয়।
অণ্ডথলিতে দুইটা অণ্ডকোষ থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটা নেমে এলেও আরেকটা শরীরের অন্য স্থানে আটক থাকতে পারে। এক্ষেত্রে কুঁচকি এবং কিডনির নিচে থাকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অণ্ডকোষ না পাওয়া যায় তাহলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর অপেক্ষা করা যায়।
অণ্ডকোষে গুরুত্বপূর্ণ ২টি রোগ-
টরশন অব টেসটিস:
এ রোগে অণ্ডকোষ জোড়া অণ্ডথলির ভেতর এমনভাবে পেঁচিয়ে থাকে যে, অনেক সময় অণ্ডকোষের রক্তপ্রবাহ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের এ রোগটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাপমাত্রার উত্থান-পতন, আঘাত, যৌনক্রিয়া, পেটের মাংসপেশির অকস্মাৎ সংকোচন, ভারী ওজন দ্রুত তোলা, অনিয়ন্ত্রিত খেলাধুলা ইত্যাদি কারণে এমন সমস্যা হতে পারে।
লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর মধ্যে তলপেট, কুঁচকি এবং অণ্ডথলিতে আকস্মিক অসহনীয় ব্যথা এবং অণ্ডথলি লাল হয়ে ফুলে যাওয়া উল্লেখযোগ্য। রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্তপ্রবাহের মাত্রা বা অনুপস্থিতির পরীক্ষা করাতে হয়।
অতি দ্রুত সার্জারি এ সমস্যার একমাত্র চিকিৎসা।
অণ্ডকোষের প্রদাহ বা অ্যাকিউট এপিডিডাইমো-অর্কাইটিস:
কিশোর ও তরুণদের এই রোগটি বেশি হয়। অণ্ডকোষের এক ধরনের সংক্রমণের কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকে। স্বাভাবিক একটি রোগ হলেও এর কারণ সম্পর্কে আমরা অবগত নই। চিকিৎসা না নিলে অণ্ডথলিতে অ্যাবসেস, অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যাওয়া, এমনকি প্রজনন ক্ষমতাও বিনষ্ট হতে পারে।
অণ্ডকোষের প্রদাহের প্রধানতম কারণের মধ্যে আছে মূত্রনালির সংক্রমণ ও প্রোস্টেট সংক্রমণ। এ ছাড়া মানসিক আঘাত, যক্ষ্মা, পুরুষ ব্রুসেলোসিস সংক্রমিত হওয়ার ফলেও এ রোগ হয়ে থাকে। ইউরেথ্রাল ইনস্ট্রুমেনটেশনের কারণে এই রোগ হতে পারে। দীর্ঘদিনের মূত্রনালির সংক্রমণ থেকেও এ রোগ হতে পারে। অনেক সময় টিবি বা মাম্পস রোগ থেকেও অর্কাইটিস হয়।
এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে অণ্ডকোষসহ তলপেটে ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাবের সময়ও তীব্র ব্যথা হতে পারে। কখনো কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। আবার কখনো অণ্ডথলি ফুলে যেতে পারে এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। চিকিৎসার জন্য দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ সংক্রমণ থেকে জটিলতা আরও বাড়তে পারে। সুনির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করলে সাধারণত সেরে যায়। সচরাচর এই রোগে সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না।
প্রসঙ্গত, অণ্ডকোষ ও অণ্ডথলির রোগ নিয়ে উদাসীনতা না দেখিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে অনেক বড় বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
যাযাদি/ এস