‘পুলিশ আমাকে গুলি করছিল আর লাফ দিতে বলছিল' আমির বলেন, "আমি যখন ভবনটিতে প্রবেশ করি, তখন একাধিক পুলিশ অফিসার আমার পিছনে দৌড়ে আসে।” নিজেকে বাঁচাতে আমির তখন চতুর্থ তলা থেকে লাফ দিয়ে ভবন থেকে বের হয়ে থাকা একটি রড ধরে ঝুলে থাকেন।
১৮ বছর বয়সি আমির হোসেন রাজধানীর আফতাবনগরে একটি হোটেলে চাকরি করেন। ১৮ জুলাই বিকেলে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মেরাদিয়া বাজারের কাছে তিনি মানুষজনকে বিক্ষোভ করতে দেখেন।
রাস্তার দুই প্রান্ত থেকে পুলিশ ও বিজিবি বিক্ষোভকারীদের দিকে আসতে থাকলে আমির আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তখন তিনি পাশের একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে দৌড়ে যান এবং ছাদের দিকে উপরে আশ্রয় নেন। পুলিশও তার পিছু ধাওয়া করে।
এরপর যা ঘটে তা পুরো জাতিকে হতবাক করেছে। ঘটনার এক ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, আমির মরিয়া হয়ে একটি রড আঁকড়ে ধরে ভবনের চতুর্থ তলা থেকে ঝুলছেন। এ সময়ও পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে।
আমির বলেন, "আমি যখন ভবনটিতে প্রবেশ করি, তখন একাধিক পুলিশ অফিসার আমার পেছনে দৌড়ে আসেন।" নিজেকে বাঁচাতে আমির তখন চতুর্থ তলা থেকে লাফ দিয়ে ভবন থেকে বের হয়ে থাকা একটি রড ধরে ঝুলে থাকেন।
"আমি যখন ঝুলে ছিলাম, ওরা বারবার আমাকে লাফ দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তা করিনি; আমি রড ধরে রেখেছিলাম। ওরা আমাকে গুলি করতে থাকে এবং আমাকে লাফ দিতে বলেন। কিন্তু আমি ঝুলে থাকি", যোগ করেন আমির।
তিনি আরও বলেন, "তারপর একজন পুলিশ অফিসার আমাকে তৃতীয় তলা থেকে গুলি করে এবং আমার পায়ে ছয়টি গুলিবিদ্ধ হয়। আমি ওদের বলতে থাকি যে, আমি আন্দোলনের সাথে যুক্ত নই। আমি কেবল কাজ শেষে বাসায় যাচ্ছিলাম।"
পুলিশ চলে যাওয়ার পর আমির লাফ দিয়ে তৃতীয় তলার বারান্দায় পড়ে যান। তিনি তখন ব্যথায় চিৎকার করতে থাকেন। কারণ তার দুই পায়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
আমির বলেন, "আমার জ্ঞান ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলাম।"
প্রায় তিন ঘণ্টা পর আমিরকে যে বিল্ডিংয়ে গুলি করা হয়েছিল তার পাশের বিল্ডিং থেকে স্পেশালাইজড হাসপাতালের দুজন ডাক্তারকে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি তিন দিন অবস্থান করেন। বর্তমানে তিনি বনশ্রীর আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমিরের প্রশ্ন আমি 'আমি আবার কবে হাঁটতে পারব?'
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন শুরু হয় জুলাইয়ের প্রথম দিকে। যা শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারকে পতন ঘটায়। এক্ষেত্রে ১৬ জুলাই প্রথম মৃত্যুর পর ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই আরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬২৬ বলে দাবি করা হচ্ছে। আর আহতের সংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যানই নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ধারণা, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আন্দোলনে আহত প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ।
যাযাদি/ এস