রোববার থেকে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘেষণা হলেও গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের (বশেমুরকৃবি) শিক্ষার্থীরা ক্লাশে ফিরেনি। তারা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকসহ ভবনের সকল কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার ত্যাগ ত্যাগের পর শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ কয়েক কর্মকর্তার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তারা অদ্যবদি কেউ পদত্যাগ না করে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকালে ক্লাশে যোগ না দিয়ে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ভিসির অফিস তথা প্রশাসনিক ভবনের সকল কর্মকর্তা—কর্মচারীকে কক্ষ ত্যাগের সুযোগ দিয়ে কক্ষের দরজায় এবং ভবনের প্রধান ফটকটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থী জানান, বিগত বছরগুলোতে বর্তমান প্রশাসনের উল্লেখিত কর্তাব্যাক্তিরা বিভিন্ন দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। বিনা দোষে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, বহুশিক্ষার্থীকে মিথ্যা মামলায় দিয়ে পুলিশী হয়রানী, ছাত্রবাসে পুলিশের চিরুনী অভিযান, অস্ত্রের মুখে শিক্ষর্থীদের গ্রেপ্তারের মতো নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছেন। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের নিবৃত করতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, মানসিক চাপ প্রয়োগ, এবং গভীর রাতে নিরাপত্তা ব্যাতিরেকে আবাসিক হলগুলো থেকে জোর পূর্বক বের করে দেয়ায় সকলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তাদের অতীত শুধরে নিয়ে যৌক্তিক দাবি পূরণে প্রশাসনকে ১১দফা দাবি জানিয়ে ১৩ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে উপাচার্যকে সকলের সামনে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু তাদের ওই দাবি না মেনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানা ভয়ভীতি, ব্লাকমেইল, ও নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ১৬ আগস্টের মধ্যে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ কয়েক কর্মকর্তার পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। তারপর তারা পদত্যাগ না করায় ১৮ আগস্ট প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়া হয়েছে। এরপরে ও তারা পদত্যাগ না করলে যানবাহন চলাচল ও সকল দাপ্তরিক কার্যক্রমে চূড়ান্ত অসহযোগিতার ডাক দেয়া হবে এবং তা পদত্যাগ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষক/কর্মচারীরা ও আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ^বিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিবছর জুন ক্লোজিংয়ের কাজ সারতে দুই বা ততোধিক মাস সময় লেগে যায়। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বিগত অর্থবছরের অনেক ধরণের আর্থিক সমন্বয় ও ঠিকাদারদের বকেয়া বিলসহ বিভিন্ন কাজের ফাইল ওয়ার্ক শেষ করতে পারেনি উপাচার্য। এসব কাজের মধ্যে হলো বিভিন্ন প্রকল্পের বিলে স্বাক্ষর, শিক্ষার্থীর বৃত্তি প্রদান, উন্নয়নমূলক কাজের বিল। এছাড়া প্রশাসনিক নিয়মিত কার্যক্রম যেমন শিক্ষক—কর্মকর্তা—কর্মচারিদের ছুিুট মঞ্জুর, যোগদান, এনওসি প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাপকবভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগস্ট মাসের বেতন পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। ভিসি এ মূহুর্তে পদত্যাগ করলে ওইসব কাজ সম্পন্ন করার বিকল্প কোন পথও থাকবে না। এতে প্রশাসনিক ও আর্থিককাজে নানা জটিলতা দেখা দিবে। তাই তাকে পদত্যাগ করানোর আগে এসব কাজগুলো সেরে নেয়াই হবে আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
যাযাদি/ এস