রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

গুলিতে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহতের কথা উল্লেখ নেই, মামলার এজাহারে

বেরোবি প্রতিনিধি
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ১৪:৫৯
আপডেট  : ২৮ জুলাই ২০২৪, ১০:১৬
ছবি-সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। নিরস্ত্র আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলি ছোড়ার ভিডিও প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

তবে পুলিশের প্রাথামিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

এফআইআরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। এতে আরও বলা হয়, সহপাঠীরা সাঈদকে (২৩) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ক্যাম্পাস পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বিভূতি ভূষণ রায়ের লেখা এই এফআইআরে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত দুই থেকে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এফআইআরে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র বিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ও তাদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে এলোপাথাড়ি গুলি শুরু করে।

এফআইআরের বিষয়ে বিভূতি ভূষণ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি মাত্র মামলা দায়ের করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য যাচাই করবেন।’

তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, নিজেদের দোষ ঢাকতেই বিক্ষোভকারীদের ওপর দোষ চাপাতে চাইছে পুলিশ। তাঁরা বলছেন, নিরস্ত্র আবু সাঈদকে সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করলেও মামলায় আবু সাঈদকে গুলি করার কথা উল্লেখ করেনি পুলিশ। নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ মারা গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সুস্পষ্ট মামলা হয়নি। উল্টো নিজেদের দোষ ঢেকে পুলিশ দায়ী করেছে আন্দোলনকারীদের।

আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশিত ভিডিও যাচাই করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, অন্তত দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে তাকে লক্ষ্য করে ১২-গেজ শটগান থেকে সরাসরি গুলি ছোড়েন। সে সময় সাঈদ তার বুক চেপে ধরে এবং পুলিশ কর্মকর্তা কমপক্ষে আরও দুবার গুলি চালান। এ নিয়ে ১৭ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে সাঈদ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভৌগলিক অবস্থান শনাক্ত করে গত ১৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, গুলি চালানোর সময় তারা প্রায় ১৫ মিটার দূরত্বে ছিল। সাঈদ পুলিশের জন্য দৃশ্যত কোনো শারীরিক হুমকির কারণ ছিলেন না। সাঈদের ওপর পুলিশের হামলা ছিল বেপরোয়া ও বিনা উসকানিতে।

সেদিন আন্দোলনকারী একাধিক শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। ১৬ জুলাই দুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন তিনি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আবু সাঈদ একা দাঁড়িয়ে তা মোকাবিলার চেষ্টা করেন। বুক উঁচিয়ে দেওয়া আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। রংপুর মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, সাঈদের শরীরে শতাধিক গুলির ক্ষত ছিল।

আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, ‘হাত, বুক, পিঠ, মুখসহ সাঈদের শরীরের শতাধিক স্থানে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথার পেছনে ফুটো হয়ে রক্ত ঝরছিল।’ সাঈদের শরীর ঝাঁজরা করে দেওয়া সেই পুলিশের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পুলিশের লুকোচুরির ঘটনা রহস্যজনক। পুলিশের সেই কর্মকর্তাকে কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে, জনগণ তা জানতে চায়।’

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে