মধ্যরাতে রণক্ষেত্র জাবি, শিক্ষক-সাংবাদিকসহ আহত দুই শতাধিক

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৫

জাবি প্রতিনিধি‌
ছবি-যায়যায়দিন

মধ্য রাতে পুলিশ-ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক এবং চার জন সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) রাত ১২ টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপর এই হামলার ঘটনা শুরু হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে চলে এ হামলা।

রাত সোয়া ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক ছেড়ে রাস্তায় চলে যান। পরে রাত পৌনে একটার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমা ছুড়ে বাসভবনের প্রধান ফটকের লাইটসহ বিভিন্ন লাইট ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও কাচের বোতল ও ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় উপাচার্য, প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষক নেতারা বাসভবনে উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, হামলাকারী ব্যক্তিদের অধিকাংশের মাথায় হেলমেট ও হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় দুটি পেট্রলবোমা ছুড়তে দেখা যায় তাদের। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে উপাচার্য বাসভবনে ছাত্রলীগের ভয়াবহ হামলার শিক্ষার্থীরা জীবন বাঁচাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করতে থাকেন৷ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হামলার ঘটনা লাইভ করেন। যেখানে দেখা যায়, প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী কাচের বোতল ও ইটের আঘাতে জখম। অধিকাংশের মাথা ফেটে রক্তে লাল হয়ে পড়ে মেঝে। শিক্ষার্থীদের সাহায্যে ছেলে ও মেয়েদের হল থেকে একযোগে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী বের হন। শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ আমবাগান গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পালিয়ে যান।

পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ভাংচুর চালাতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়তে থাকেন পুলিশ। রাত পৌঁনে তিনটায় আন্দোলনকারীদের দমাতে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। এতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. খোঃ লুৎফুল এলাহী মারাত্মকভাবে আহত হন। এসময় সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও গুলি ছুড়লে চারজন দায়িত্বরত সাংবাদিক আহত হন। এছাড়াও রাতভর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশসহ একটি জলকামান আনা হয়েছে জাবি ক্যাম্পাসে।

এর আগে, সন্ধ্যা সাতটার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে আসলে অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নয়ত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। অতর্কিত এই হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিতে থাকে ছাত্রলীগ। এসময় চার পিক-আপ বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে ঢুক্র ছাত্রলীগের সাথে অবস্থান নেয়।  আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের আক্রমণের আশঙ্কায় উপাচার্যের বাসভবনের ভেতর আশ্রয় নেন। এ সময় ছাত্রলীগ গেটের বাইরে অবস্থান নিয়ে শোডাউন শুরু করে। ২০ মিনিট পর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ছাত্রলীগকে বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ফোন কলে কারও সঙ্গে কথা বললে  ভিতর থেকে গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর তিন ঘণ্টাব্যাপী উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ সদস্যরা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সকালে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরে গেছেন। পুলিশ জলকামানসহ উপাচার্যের বাসভবনে টহলে আছেন। তবে সকালের আলো ফুটতেই বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিতে দেখা গেছে।

যাযাদি/ এস