চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর। হামলার ঘটনায় রাতভর আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৪ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে, রোববার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আন্দোলনকারীদের অবমাননা করছে। এমনকি কোটা বিরোধীদেরকে পরোক্ষভাবে রাজাকার বলে সম্বোধন করা হয়েছে বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটা সংস্কার বিষয়ে স্লোগান দেওয়ার কারণে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে ডাইনিং হলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোন চেক করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে জড়ো হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে বৈঠকে বসেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার।
এছাড়াও শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে একই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে মিছিল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন আন্দোলনকারীরা।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারও বাপের না’, ‘লাখো শহিদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’; ‘আমার ভাই আটক কেন, জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রাত দুইটার দিকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুনরায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে যায়। এসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন এবং মুখোমুখি অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। এসময় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আর রাফি চৌধুরী ও অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাকিদের নেতৃত্বে আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেন আন্দোলকারীরা৷ এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা হলে ঢুকে গেটে তালা আটকিয়ে দেয়।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তৌহিদুল আলম তাকিদ জানান, ‘আন্দোলনকারীরা আমাদের হলের সামনে এসে কোটা আন্দোলনের নামে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগকে অবমাননা করে স্লোগান দিচ্ছিল। তখন আমরা একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে তারা বাধা দেন এবং গালিগালাজ করেন। তাদের কোনো হামলা করিনি, যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি।'
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীরসহ কয়েকজন শিক্ষক দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দেন ও নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গালাগাল করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং হামলার জের ধরে হলের সামনে রাতভর আন্দোলন চালিয়ে যান।
এদিকে, আন্দোলনের খবর পেয়ে হলে উপস্থিত হন আন্দোলন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার। তবে এসময় তিনি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে উলটো ছাত্রলীগকে উস্কে দিয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের জেরা করার প্রমাণে শিক্ষার্থীরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে ‘টেকনিশিয়ানের কাছে কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড আছে’ বলে জানান প্রভোস্ট। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি জানান। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাত সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হহ্ন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ।
এসময় উপ-উপাচার্যের উপস্থিতিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার। এসময় নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, আমি মৌখিকভাবে পদত্যাগ করলাম। পরে সব ফর্মালিটিজ পূরণ করবো। এই দায়িত্বে আর ফেরত আসবো না।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ সোমবার সকাল ১১টায় সামগ্রিক বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে আশ্বস্ত করেন। উপ-উপাচার্যের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভোর সাড়ে চারটার দিকে আন্দোলন থামিয়ে হলে ফিরে যান।
যাযাদি/ এসএম