জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ ’আধুনিক ডেটা সেন্টার’ স্থাপন করা হবে: উপাচার্য
প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২৪, ২১:১২
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন সেবা পূর্ণমাত্রায় দেয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ আধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপন করা ছাড়াও করোনা মহামারীর কারণে পিছিয়ে পড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েকে এগিয়ে নিতে (ক্লাশ ও পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে গতিময়তা আনার) নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলোতে আইসিটি বিষয়কে আবশ্যিক করার চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এজন্য প্রতি কলেজ থেকে দুইজন করে শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কলেজ পরিচালনা কমিটির মেয়াদ দুই বছরের স্থলে তিন বছর করার প্রস্তাব উঠলে সে বিষয়ে সিনেট সভায় কেউ বিরোধিতা করেননি।
শনিবার গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের সিনেট হলে ২৬তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে সিনেট চেয়ারম্যানের অভিভাষণে এসব কথা বলেন উপাচার্য। সিনেটের এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর ও সিনেট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান।
সিনেট অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ. বি. তাজুল ইসলাম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন এমপি, মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এমপি, এস. এম. কামাল হোসেন এমপি, সাজ্জাদুল হাসান এমপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, পিএসসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়াার মুহাম্মদ হুমায়ূন কবিরসহ ২১ জন সিনেট সদস্য।
এছাড়া সিনেট অধিবেশনে বিভাগীয় কমিশনারবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদসহ ৬৪ জন সিনেট সদস্য ও ২ জন আমন্ত্রিত সিন্ডিকেট সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সিনেট অধিবেশনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
এরপর দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ও তাদের আপনজন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উদ্দেশে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সিনেট সচিব ও বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিনেট অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করেন সিনেট চেয়ারম্যান ও ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে সিনেট চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সামনে একমাত্র পথ-সঠিক পদক্ষেপ ও পরিচর্যার মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সমন্বিত উপায়ে উৎকৃষ্ট শিক্ষা, দর্শন ও সময় উপযোগী মানবসম্পদ সৃষ্টি।
এর জন্য প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত শিক্ষক, শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পরিমার্জিত কারিকুলাম, যুগোপযোগী বিষয়সমূহ প্রবর্তন, নতুন নতুন দক্ষতাভিত্তিক কোর্স প্রবর্তন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর শিক্ষার্থীর জন্য বিকল্প দক্ষতাভিত্তিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
আরও প্রয়োজন মানবিক বোধসম্পন্ন ইতিহাস ও সমাজসচেতন শিক্ষার্থী তৈরি। দেশের মূল্যবোধকে ধারণ করবে এমন দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত- গণতান্ত্রিক পরিবেশ, সৃজনশীল, সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক।’
উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে বিশে^ আদর্শগত নেতৃত্ব দেবার জায়গায় দেখতে চাই। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সামনে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে অদম্য গতি, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যেতে চাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ অবশ্য পাঠ্য করে যেমন একদিকে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী তৈরিতে দৃঢ়তা রেখেছে, তেমনি আইসিটি কোর্সকে অবশ্য পাঠ্য করে তাদেরকে তৈরি করতে চাই যোগ্যতর মানুষ হিসেবে।
প্রতিবন্ধকতা আমাদের আছে, সমস্যাও আছে বহুমুখী। কিন্তু সেসব উত্তরণে আমাদের নিজস্ব শক্তি, নেতৃত্ব ও ভিত্তি ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। তবে আমাদের জমির খুব স্বল্পতা রয়েছে, মাত্র ১২একর জমির উপর এ ক্যাম্পাস স্থাপিত। জমির স্বল্পতার কারণে ক্যাম্পাসে এখনও উপাচার্য, প্রো-উপাচার্ষ, কোষাধ্যক্ষ-এর বাসভবন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আমরা ভ’মি অধিগ্রহণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মানুষের প্রত্যাশা ও উদ্বেগ দুটোই রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশার জায়গা হলো-দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি হলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিপুল পরিমান সহায়ক শক্তি পাবো। আর উদ্বেগের কারণ হলো দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করা সম্ভব না হলে আমাদেও অগ্রসরতা, পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিসহ তরুণ জনগোষ্ঠির মধ্যে বিষন্নতা সৃষ্টি হতে পারে। আর এজন্য আমাদেও একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ ও পরিচর্চার মাধ্যমে অভিষ্ঠ লক্ষে পৌঁছাতে সমন্বিত উপায়ে শিক্ষা, দর্শণ ও সময়োপযোগী মানব সম্পদ সৃষ্টি ।
এরজন্য প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষে মান সম্মত শিক্ষক, শিক্ষকদেও নিয়মিত প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদেও জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, পরিমার্জিত কারিকুলাম, যুগোপযোগী বিষয়সমূহ প্রবর্তন, নতুন নতুন দক্ষতাবৃদ্ধিও কোর্স প্রবর্তন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প দক্ষতাভিত্তিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
উপাচার্য বলেন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় একটি বৃহৎ পরিবার। সেই পরিবারের সকলকে আমাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত করা আসলেই দু:সাধ্য। যে কারণে আমরা মনে করি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর জন্য আলাদা প্লাটফর্ম, একটা আলাদা রিসোর্স হাব তৈরি করা আবশ্যক। ইতোমধ্যে এ-টু-আই –এর সহায়তায় সমস্ত পরিকল্পনা শেষ, অতিসত্বও এ রিসোর্স হাব উদ্বোধন করা হবে।
এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই সেই রিসোর্স হাবে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল কন্টেন্ট পাবে। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেও জন্য মেন্টাল হেল্থ বিষয়ক অনেকগুলো কর্মশালা সম্পন্ন করেছি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি কলেজে স্মার্ট প্রমোশন সেন্টারেরও আয়োজন করেছি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার কমে আসছে। আমি আশা করবো আমাদের নতুন নতুন প্যাডোগজি, নতুন নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা, কলেজের মান বৃদ্ধিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার সমন্বয় করতে পারলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও তাদের ক্লাশে আকৃষ্ট করতে পারবে।
উপাচার্য আরো বলেন, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিতে যার যে-টা প্রাপ্য তা মেধা-দক্ষতার ভিত্তিতে করার কাজ গুছিয়ে এনেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর যতো কর্মকতৃা-কর্মচারী অবসওে গেছেন তাদেরকে একদিনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় এলামনাই গঠণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে তার নীতিমালা চ’ড়ান্ত করা হয়েছে। পাশিাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতেও পৃথক এলামনাই থাকবে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ২০৯৭ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার বাজেট ঘোষণা শনিবার সিনেট অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার ও বাজেট পাঠ করেন। তিনি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেন সর্বমোট ২০৯৭ কোটি ৩১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
প্রস্তাবিত এ বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেটে ৭২১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ১৩৭৫ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
এছাড়া সিনেট অধিবেশনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ৫৬৪ কোটি ৫০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হয়।
যাযাদি/ এম