সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের জন্য যেমন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন চলছে, অন্যদিকে চলছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল ও বাংলাব্লকেড কর্মসূচি। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী আন্দোলনে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার ফলে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। এতে সেশন জটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সচেতনমহল।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সামনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অন্যদিকে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় বাতিল এবং কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর বিক্ষোভ মিছিলটি প্রশাসনিক ভবন হয়ে শেখ হাসিনা হল প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে আসে। এরপর মাহতাব টাওয়ার প্রদক্ষিক করে ক্যালিকো কটন মিলের দিকে যায়। ক্যালিকো কটন মিল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সামনে এসে মিছিল শেষ করে এবং পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাস্তার উপর বসে পড়েন। প্রায় চার ঘণ্টা এই অবরোধ কর্মসুচি পালন করেন তারা। এতে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন সাধারণ জনগণ।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশে ছাপান্ন শতাংশ কোটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। মহামান্য হাইকোর্ট কোটা নিয়ে যে রায় দিয়েছেন সেটা ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা কোটা ব্যবস্থা সংস্কার চাই। চাকরি ব্যবস্থায় কোন বৈষম্য আমরা চাইনা। কোটা থাকবে এতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু তাই বলে ছাপান্ন শতাংশ কেনো? তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়?
তারা আরো বলেন, ছাত্র সমাজ বাহান্নর আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আমাদের এই আন্দোলন আমাদের অধিকার আদায়ের। আমরা আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হটবো না।'
এসময় তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে টানা ১০ম দিনের মত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পাশাপাশি বেলা ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থা কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এসময় শিক্ষকেরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মেধা, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কর্মদক্ষতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে নানা রকমের হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। প্রত্যয় নামক সর্বজনীন পেনশন স্কিম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।
শিক্ষকরা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের যে ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে, তা কখনোই হতে দেওয়া হবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনি বিচক্ষণতার সঙ্গে আমাদের সমস্যার সমাধান করবেন। আমরা মনে করি, একদল কুচক্রী মহল সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
যাযাদি/ এসএম