জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক 

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২৪, ১৪:৪৯

জাবি প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে কোটা পুনর্বহালের অন্যায্য সিদ্ধান্ত বাতিল ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পূর্বঘোষিত "বাংলা ব্লকেড" কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রোববার (৭ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। 

শুরুতে বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে সাভারের ধামরাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রার জন্য সময় পরিবর্তন করে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। মহাসড়ক অবরোধের ফলে রাস্তার দুপাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয় এবং কার্যত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ে।

আন্দোলনকারীরা জানান, একই সাথে নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে। বাংলা ব্লক কর্মসূচিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সে অংশ হিসেবে আমাদের এ বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি।

অবরোধ কর্মসূচিতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল হাসান বাপ্পি বলেন, বাংলাদেশের মেধাকে সঠিক মূল্যায়ন দিতে ব্যর্থ হয়েছে এ সরকার। এই সিদ্ধান্ত বাংলার প্রতিটি মেধাবীর জন্য অন্যায্য। আমরা ছাত্রসমাজ কখনো এই বৈষম্য মেনে নিবো না। সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরিতে কোনো কোটা থাকবে না। তবে সংবিধান অনুসারে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখা যেতে পারে।

আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী জাইবা জাফরিন বলেন, "বৈষম্যমূলক এ কোটা প্রথার মাধ্যমে মুক্তিযুদদ্ধের প্রজন্মকে সুবিধা দেওয়া সংবিধান পরিপন্থী। আমরা এ বৈষম্যের নিরসন চাই। আমাদের এ দাবির সাথে সকল শিক্ষার্থীই একমত পোষণ করেছেন৷ কোটা প্রথার অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে৷ সারা বাংলার ছাত্র সমাজ আজ জেগে উঠেছে। আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

অবরোধ চলাকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুপাশে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হলে এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন অনেকে। তবে এসময় রোগী বহনকারী এম্বুলেন্সকে রাস্তার বিপরীত পাশ দিয়ে ছেড়ে দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। 

ঢাকার আজিমপুর থেকে আসা শফিকুল খান বলেন, এই তীব্র গরমে অবরোধের কারণে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এই আন্দোলন যেহেতু সারা বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রদের, তাই এটা একটি যৌক্তিক আন্দোলন। এটা সবার ভালোর জন্যই হচ্ছে। তাই এই ভোগান্তি আমরা মেনে নিচ্ছি।

অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার "লাখো শহীদের বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাঁই নাই" "জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে"  "লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে"। দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত। লাখো শহীদের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই। আর না আর না, মেধাবীদের কান্না। সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে। কোটা নাকি মেধা? মেধা মেধা! সহ বেশ কয়েকটি স্লোগান দিতে থাকে।

উল্লেখ্য, গত চার জুলাই  আপিল বিভাগ কোটা প্রথা বহাল রাখার ফলে নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারই অংশ হিসেবে 'বাংলা ব্লকেড ' নামে সারা বাংলাদেশে মহাসড়ক অবরোধ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।

যাযাদি/ এসএম