রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

আজ থেকে সারাদেশে বাংলা ব্লকেড 

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০১
ছবি-যায়যায়দিন

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কোটা ইস্যুতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে শামিল হন। এদিন ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট এবং চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কগুলোর উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

ভোগান্তিতে পড়তে হয় জনগণকে। এদিকে, রাজধানীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে পুরান ঢাকা অচল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শনিবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি শেষে আজ রোববার থেকে সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে কোটা সংস্কার ইস্যুতে চার দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা। পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে কয়েকদিন রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শনিবার অবরোধ তুলে নেন তারা। এক ঘণ্টার মতো অবরোধ শেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা সরে দাঁড়ালে শাহবাগ মোড় দিয়ে ফের যান চলাচল শুরু হয়। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের আগে আজ রোববার বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এদিন বিকাল ৪-৪০ মিনিটের দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড়ের সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে চারপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কাল বিকাল ৩টা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’

ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে নাহিদ আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার অবিলম্বে খুলে দিতে হবে, নয়ত আমরা নিজ দায়িত্বে সেটি খুলে নিতে বাধ্য হব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানাই।’

এর আগে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মলচত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশীবাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে থামে।

মিছিলটি শাহবাগে আসার আগে থেকেই জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশও জাদুঘরের সামনের সড়কে মিছিল আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে আসতেই অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪-৩৭ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর ঠিক আগেই পুলিশ সদস্যরা শাহবাগের সড়কে অবস্থান নেন, তবে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেননি। মিনিট-পাঁচেকের মধ্যে মূল মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ৫০ মিনিট এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে দুপুরে একই দাবিতে পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে সড়ক অবরোধ করে টানা দুই ঘণ্টা ধরে আন্দোলন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবস্থানের কারণে পুরান ঢাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, দয়াগঞ্জ এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘নো কোটা, নো ডিসক্রিমিনেশন’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’,Ñ এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন এবং কোটাবিরোধী এসব স্লোগান দেন।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়ক দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবশে করেছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের আশেকপুর বাইপাস এলাকায় অবস্থান নিয়ে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। অবরোধের ফলে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয় পাশে অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ছাত্র সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

শিক্ষার্থীরা অনেকে হাতে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক- মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শিক্ষার্থী আখতারুজ্জামান সাজু বলেন, ‘‘চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতির ‘কবর রচনা’ করতে আমরা একত্রিত হয়েছি। যেকোনো বাধাকে উপেক্ষা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আমাদের দাবি একটাই, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে। পরিপত্র পুনর্বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি) সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে ‘কোটা সংস্কার’ করা।’’

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লোকমান হোসেন জানান, ‘শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে