সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এতে বিভাগগুলোর ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়ছে সেশনজটের শঙ্কা।
সোমবার (১জুলাই) সকাল থেকে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন তারা। এদিন সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতিও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতীর ডাক দিয়েছেন।
করোনার পর থেকে ঢাবি, জাবি, রাবি, ইবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেশনজট যেন শিক্ষার্থীদের ছুঁয়েছে অভিশাপ হয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদি সেশনজট রয়েছে। রাবিতে ৬১ টি বিভাগের মধ্যে পাঁচটি বিভাগ সেশনজট মুক্ত হলেও বাকি ৫৬ টি বিভাগে রয়েছে শিক্ষার্থীদের হতাশা। ইবিতে পাঁচ বছরের কোর্স সাত বছরেও তারা শেষ করতে পারছেন না। প্রথমবর্ষেই তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। নবীনদের মাঝেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন স্বপ্নদর্শী শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহেদ ইমাম শুভ বলেন, "পূর্বে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ভবিষ্যত গড়ার একটি উত্তম পরিবেশ। কিন্তু করোনার পর থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যেন তাদের হতাশার আরেক নামে পরিনত হয়ে গিয়েছে।করোনার সময়কার যে সেশন জট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সে জটই কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেখানে সরকারের একটা সিদ্ধান্তর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।এটা সরকারের সাথে শিক্ষকদের বিরোধ। আমাদের কেন এখানে জড়ানো হয়েছে।
আমরা চাই শিক্ষকরা সরকারের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুক।সেশনজট নিরসন করার একটা পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করার এখনই সময় ! নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার কথা বর্তমান কর্তৃপক্ষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে তাদের মানসিক চাপ কমাতে সহযোগিতা করবেন এবং শ্রেনী কক্ষে ফিরে আসবেন"একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী দুই বছরেও তৃতীয় বর্ষ শেষ করতে পারেননি জানিয়ে বলেন, "গতকাল আমার বাল্যকালের বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হল, সেখানে তৃতীয় বর্ষ শেষ করতে পারলাম না। আর ধীর গতির এই পড়াশোনা মারাত্মকভাবে জীবনে প্রভাব ফেলছে। পারিবারিক, আর্থিক,মানসিক দিকে থেকে অনেক চাপের মুখে দিন যাচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বেশ ভালোভাবেই।"
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, "সেশনজটের মতো কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। আর যদি হয়ও তাহলে আমরা তা এক্সট্রা ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে মেকআপ করার চেষ্টা করব। ছুটির দিনে আমরা ক্লাস নিয়ে এটা করতে পারি। করোনা পার করে যেমন আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছি এবারও পারব।"
তিনি আরো জানান, এ আন্দোলন তারা শিক্ষকদের জন্য করছেন না; বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্যই করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য করছেন। গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি করে আসছেন; তাতে কোনো কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাই বাধ্য হয়েই তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ আন্দোলনে নেমেছেন।
যাযাদি/ এস