বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ২০:০৩

বরিশাল অফিস
ছবি-যায়যায়দিন

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের শের-ই-বাংলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটাই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তারা কর্মবিরতি শুরু করেন। তাদের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে কিছু কর্মকর্তা সেখানে আসেন।

 এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বাঁধা দেন এবং ব্যানার ছিনিয়ে নেন। পরবর্তীতে ব্যানার ছাড়ই ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মসূচিস্থলের পাশেই অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানার আনা হলে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আবারও তাতে বাঁধা দেন। এ নিয়ে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। 

এ সময় উভয় গ্রুপ একে অপরের দিকে চেয়ার ছোড়াছুড়িও করেন। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটনের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মুকুল। 

তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে। এদিকে মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষের ১০ জন আহত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। 

হাসপাতালে ভর্তিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিম হাসান, সহকারী রেজিস্ট্রার তৌসিকুল ইসলাম রাহাত, সেকশন অফিসার মাহমুদুল হাসান, মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম। 

অন্যদিকে ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিকল্পনা দপ্তরের ডিপুটি ডিরেক্টর আবু হাসান, প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মুরশীদ আবেদীন, অর্থদপ্তরের ডেপুটি একাউন্টস অফিসার ইকবাল মিয়া এবং সহকারী রেজিস্টার আনোয়ার সাদাতও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও আহত মুরশীদ আবেদীন জানান, সরকারের পেনশন নীতিমালার ওপরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছিলাম। 

এ সময় বাহাউদ্দিন গোলাপ, নজরুল, জুয়েল মাহামুদের নেতৃত্বে কতিপয় কর্মকর্তা আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপরে হামলা চালিয়েছেন। চেয়ার, রড, লাঠি দিয়ে তারা হামলা করেছেন। এতে আমাদের ৫-৬ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছে, যারা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

এদিকে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তারা একসঙ্গেই ছিলাম ও আছি। যাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র অনুমোদিত সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। 

কিন্তু সম্প্রতি সরাসরি কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাওয়া গুটি কয়েক কর্মকর্তা ডিরেক্ট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন দাড় করানোর চেষ্টা করছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতিগত ভেদাভেদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও একটি বিভেদ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। 

এটি বুঝতে পেরে বিষয়টি আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তাই তারা ওই সংগঠনের কোনো অনুমোদন দেয়নি। তিনি আরও বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার ও কর্মকর্তাদের জন্য ইউজিসির সুপারিশকৃত অভিন্ন নীতিমালার ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত দুই থেকে আড়াই মাস ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। 

তারা সেখানে অংশগ্রহণ না করে আজ হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই অনুমোদনহীন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে আমাদের আন্দোলন স্থলে আসেন। তখন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া মাত্র তারা আকস্মিক হামলা চালালে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, যে বা যারা দায়ী হবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। তদন্ত অনুযায়ী এর সঠিক বিচার হবে। আমরা কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে দেব না।

যাযাদি/ এম